গত শুক্রবার (৫জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর কালেক্টরেট মাঠে ‘ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ উদ্বোধন করেন বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ও প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফারুক খান।আমের স্বর্গে আমন্ত্রণ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ফেস্টিভাল রাজশাহী উদ্বোধন করা হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবার বিভাগীয় পর্যায়ে এ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে। ফেস্টিভ্যালে বৈচিত্র্যময় রসনাসম্ভার, আমের মেলা,ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প পণ্য প্রদর্শনীরন আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিন ব্যাপী চলবে এই অনুষ্ঠান। ফেস্টিভ্যালের সমাপনী হবে রোববার।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর মাসুদুর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ডক্টর দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির,পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ডিআইজি আনিসুর রহমান ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, রাজশাহী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সম্ভবত যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পে রাজশাহীকে সমৃদ্ধ করতে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রাজশাহী পর্যটন মডেলকে বিদেশি সহযোগিতায় উন্নত মানের আবাসন শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। এদিকে
শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এতে রাজশাহীর ফেস্টিভ্যাল চত্বর কালেক্টরেট মাঠে জমে যায় হাঁটু পানি। স্টলে স্টলে পণ্য সাজানোর আগেই তা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা উদ্যোক্তারা। ফলে ফেস্টিভ্যাল আয়োজন উদ্বোধনেই শেষ হয় প্রথমদিন। ফেস্টিভ্যালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬৭টি স্টল দেওয়া হয়েছে। এই স্টলগুলোতে দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে। পাশপাশি ঐতিহ্য বিষয়ক জিনিসও বিক্রি করা হচ্ছে। রবিবার বৃষ্টিপাত না থাকায় ফেস্টিভ্যালে লোক সমাগম দেখা গেছে। উদ্যোক্তাদের তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে স্টল গুলোতে বসতে দেখা গেছে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে রাজশাহীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন স্টল।কেউ হাতের কারুকাজের বিভিন্ন পণ্য, কেউ বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন নিত্যব্যবহার্য জিনিস আবার কেউ মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য আবার কেউ খাবারের স্টল সাজিয়ে বসেছেন। তেমনই একজন নারী উদ্যোক্তা হলেন সিরাজগঞ্জের মেয়ে উইমেন এন্টারপ্রিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) এর সদস্য রূপা মোস্তফা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নুসরাত ফ্যাশন’ (মেলায় স্টল নং ১৯)। তিনি বিগত ৮ বছর ধরে তাঁত শিল্প নিয়ে কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠান তাঁতের ৫ ধরনের পণ্য যেমন- শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রী পিস, ওড়না ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করে থাকে। রূপা মোস্তফার সাথে কথা বলে জানা যায় তাঁতের বিভিন্ন পণ্য গুলো তার গ্রামের বাড়ি বেলকুচি,
সিরাজগঞ্জে নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হয়। তাদের কারখানায় মোট ৭১টি চায়না পারলুম রয়েছে সেখানে প্রায় ২৫০জন কর্মচারী কাজ করে। রূপা মোস্তফা তার পণ্য নিয়ে রাজশাহী ছাড়াও খুলনা, নাটোর, যশোর, ও নেত্রকোনায় কাজ করেছেন। রূপা মোস্তফার স্বপ্ন তাঁতের তৈরি তার পণ্য গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ বিদেশেও ছড়িয়ে দেওয়া। সে লক্ষ্যে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত মেলায় অংশগ্রহণ করেন।”উদ্যোক্তা” এই শব্দের সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। একজন ব্যক্তি যখন নিজের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে কোন চাকরি বা কারো অধিনস্ত না থেকে নিজে থেকেই কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার চেষ্টা করেন বা পরিকল্পনা শুরু করেন তখন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয় ।
বর্তমানে বাংলাদেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে, নারীদের এই সংখ্যা এই ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে এগিয়ে আছে। দেশে নারী উদ্যোক্তার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে করোনা অতিমারির সময় থেকে। ঘরে বন্দি থাকা সময়কালীন অনেকেই নিজেদের ফাঁকা সময়কে কাজে লাগিয়েছিলেন আনুসাঙ্গিক গুণাবলিকে বিকাশিত এবং প্রকাশ করে। রূপা মোস্তফার মতো নারো উদ্যোক্তারা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরা তৈরি করছেন। তৈরি করে নিচ্ছেন নতুন আত্মপরিচয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তার এই বিপুল সম্ভাবনা শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা মেলে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তার। যারা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। দেশব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রসারে এই ধরনের মেলা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
জ/ন