বিগত কয়েক বছরে রাজশাহী মহানগরীতে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন কোনোভাবে বিশৃঙ্খল না হয় তার জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। মহানগরীতে বাইকে বিভিন্ন অপকর্ম ঠেকানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পেট্রোল পাম্পগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন হেলমেট বিহীন কোনো ব্যক্তিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ না করে। ট্রাফিক আইনানুসারে একই মোটরসাইকেলে ২জনের বেশি আরোহী বহন না করার বিধান থাকলেও মহানগরীর রাস্তাগুলোতে একই মোটরসাইকেলে চারজন আরোহী তাও আবার হেলমেট বিহীন হরহামেশাই দেখা যায়।
এমন বেপরোয়া বাইকাররা নির্বিঘ্নে চারজন আরোহী নিয়ে পুরো শহর দাপিয়েও বেড়ায় আবারা হেলমেট ছাড়া পেট্রোলপাম্প গুলোতে জ্বালানীও পায় অনায়াসে ।
এইসমস্ত বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালক ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের বাধাহীন চলাচল বন্ধ না হলে নগরীতে ছিনতাই রাহাজানি কমবে না বলে অনেকেই মনে করছেন।
এদিকে, রাতে পুলিশি টহল দৃশ্যমান না থাকার কারণে উচ্ছৃঙ্খল লোক ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, রাজশাহী বাস টার্মিনাল, চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকা, উপশহর, শালবাগান, ভদ্রা মোড়,সোনাদিঘি মোড়, পদ্মা নদীর ধার, টাঙ্গন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, তেরোখাদিয়া থেকে সিটি হাট রোড এলাকায় অপরাধীদের তৎপরতা বেশ বেড়েছে। সুষ্ঠু পদক্ষেপ ও টহলের অভাবের কারণে চুরি ও ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যক্রম সুফল বয়ে আনছে না। রাজশাহী টার্মিনাল এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত লোকের আনাগোনা দেখা যায়। এলাকাটি নানা কারনে ক্রাইম স্পট হিসেবে অভিহিত হলেও উক্ত এলাকায় পুলিশি তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। আরএমপির জন্ম লগ্ন থেকে ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে এখানে পুলিশ বক্স রয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এখানকার ইনচার্জ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বছরের পর বছর ধরে এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর কে দ্বায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে সে কারণে সন্দেহ ভাজন অপরাধীদের দেহতল্লাশি, মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও চুরি ছিনতাই এবং পকেটমারের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এমনকি এই বক্সের সদস্যরা দীর্ঘদিন থেকে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার কিংবা চোর ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। একইভাবে নগর পুলিশের আওতাভুক্ত আরো কয়টি পুলিশ বক্স ও পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
বোয়ালিয়া মডেল থানায় যতজন অফিসার ও কনস্টেবল প্রয়োজন সে তুলনায় এ থানায় লোকবল কম কিন্তু নগরীর আরো আটটি কম গুরুত্বপূর্ণ থানায় প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল বেশি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে গোয়েন্দা বিভাগ ও আদালতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লোক নিয়োগ থাকায় তাদের মধ্যে পারস্পরিক সুষ্ঠু সমন্বয়হীনতা বেড়েই চলেছে।
তবে বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সড়ক গুলোতে পুলিশের টহল বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন পালনে আরও কঠোর হওয়াসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো: জামিরুল ইসলাম বলেন, যারা কিশোর ও ছিনতাই গ্যাংয়ের নামে অপরাধ কার্যক্রম চালায়, তাদেরকে আমরা সন্ত্রাসী বলব। তিনি বলেন,‘অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কিশোর ও ছিনতাই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত যে–ই হোক না কেন, আমরা তাদের শক্ত হাতে দমন করছি, ভবিষ্যতেও করব।’
বিএ…