সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

দেশের মাদকপ্রবণ এলাকার মধ্যে এখন অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট রাজশাহী!

নজরুল ইসলাম জুলু :
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তবুও থেমে নেই মাদকের কারবার।  দেশের মাদকপ্রবণ এলাকার মধ্যে এখন অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট রাজশাহী। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট ছাড়াও নগরের বেশ কয়েকটি এলাকা মাদকপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে হেরোইনের চালানগুলো রাজশাহীর গোদাগাড়ী হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। র‌্যাবের হাতে বড় বড় চালান আটক হচ্ছে। মাদক উদ্ধারে র‌্যাব বরাবরতে মতো সাফল্য পেয়েছে। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। র‌্যাব মাদক উদ্ধারে সাফল্য পেলেও রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশ তেমন বড় কোন উদ্ধার দেখাতে পারেনি। পুলিশের নিয়মিত অভিযানেও তেমন বড় সাফল্য নেই বললেই চলে।

তবে ফেনসিডিলের চেয়ে এখন সবচেয়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মরণনেশা ইয়াবা। নগরের অনেক পাড়া-মহল্লাতেই এখন মাদক বিক্রি হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমে বেশি অর্থ কামানোর সুযোগ থাকায় অনেকেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর যেসব এলাকায় মাদকের ব্যবসা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, নগরীর বোয়ালিয়া থানাধিন পাচানীমাঠ, পঞ্চবটি, খরবোনা, কেদুর মোড় নদীর পাড়, হাদির মোড় নদীর পাড়, শহিদ মিনার, নিউমার্কেট, অলকার মোড়, টিকাপাড়া (খুলিপাড়া) সাগরপাড়া, বাসটার্মিনাল, হোসনেগঞ্জ বেত পট্টি, ঘোষপাড়ার মোড়, শিরোইল কলোনী কলোনি, সিএমবির মোড়, লক্ষ্মীপুর, বিনোদপুর, জাহাজ ঘাট, গুড়িপাড়া,

খড়খড়ি বাইপাস এলাকা, বারো রাস্তার মোড়, ট্রাক টার্মিনাল, ভাটাপাড়া, হড়গ্রাম পূর্বপাড়া, (বাগানপাড়া), টুলটুলিপাড়া মোড়, কাঁঠালবাড়িয়া, বায়ার মোড়, নওদাপাড়া, কোর্ট মোল্লাপাড়া, বুধপাড়া, জাহাজঘাট ও মিজানের মোড় ও জামিরা, ভড়ুয়াপাড়া, হরিপুর। এ ছাড়াও কাটাখালি ও কাশিয়াডাঙ্গা এবং দামকুড়া থানার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। এলাকায় মাদকের ব্যবসা ছলছে রমরমা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা এসব মাদকদ্রব্য বিভিন্ন কৌশলে ট্রাক অথবা বাসে পৌঁছে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। এরপর ভাগ ভাগ হয়ে বিভিন্ন খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরাও মাথা চাড়া দেয়। তারা কথিত বড় ভাইদের আদেশে যেকোন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই যুবক ও ধনী পরিবারের সন্তান। মাদক বিক্রির কাজে কিশোর গ্যাং এর পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের সুন্দরী স্কুল, কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের এখন ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। আবার কেউ কেউ বিউটি পার্লারের আড়ালে চালাচ্ছে এই মাদক ব্যবসা।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এসব মাদক ব্যবসায়ীরা নগরের গুরুপূর্ণ  থানার অসাধু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ব্যবসা করে আসছে কিশোর গ্যাং সদস্যরাও। মাদক,কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারী বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে আসছেন দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকায়। বিভিন্ন মহলের ব্যাপক প্রশংসা পেলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের কোন মাথাব্যথা নেই।

এসব মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে এসব কারবার চালাচ্ছে। ইতিপূর্বেও এসব পুলিশ সদস্যদের একাধিক অভিযোগ উঠলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

কিছু পুলিশ সদস্যদের বদলি হলেও অনেকের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদিও আরএমপির উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্টেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটাও এখন ভাটা পড়ে গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, যারা পুলিশ কন্সটেবল থেকে এএসআই ও পরে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হয়েছেন তারাই বেশি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তো। কিন্তু এখন পুরোই উল্টো। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ছত্রসায় চলে  এসমস্ত কারবার।

নগরের সচেতন মানুষ বলছেন করোনার সময় অনেক পুলিশ সদস্য ভালো কাজ করে নিজের জীবন দিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। গুটি কয়েক পুলিশ সদস্যের কারণে অনেক ভালো ভালো কাজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তাই যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

যদি কোন অসাধু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে অনেকেই আর মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা করবেনা। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের মতো বড়ো বড় চালান ধরার চেষ্টা করতে পুলিশের প্রতি আহবান জানান তারা।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মো: জামিরুল ইসলাম অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। কোন মাদক ব্যবসায়ীকেই ছাড় দেয়া হবেনা। মাদক উদ্ধারে আরএমপির তেমন বড় কোন সাফল্য নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ মাঝে মধ্যে বড় চালান আটক করছে। তবে পুলিশের মাদক উদ্ধার ছাড়াও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এরমধ্যে দিয়েও পুলিশ চেষ্টা করছে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক নিমূলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ছিনতাইকারী, ও কিশোর গ্যাং নিয়ে আমরা কাজ করছি। অতিদ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জ/ন

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..