রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুর থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চালানো হচ্ছে রমরমা ব্যবসা। দেখাযায় পুরো ফুটপাত ও রাস্তার অর্ধেক দখল করে দোকান বসানোর কারণে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। যদিও সংশ্লিষ্ট পুলিশ বক্সের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়না। উল্টো অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ বক্সকে ঘুষ দিয়ে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আউটডোর খোলা অবস্থায় রোগীদের ভিড় থাকে অনেক বেশি। এ সময়ে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের টার্গেট করে বিভিন্ন ধরণের অস্থায়ী দোকান বসানো হয়। এসব দোকান ফুটপাত ছাপিয়ে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত দখল করে বসানো হয়।
নগরের অভ্যন্তরীণ রিক্সা, অটোরিক্সা ছাড়াও বিভিন্নপ্রান্ত থেকে রোগীবাহি গাড়ী হাসপাতালে আসে। লক্ষীপুর মোড়ের রাস্তা দিয়ে আসা গাড়ীগুলোকে আউটডোরের সামনের রাস্তায় এসে যানজটের কবলে পড়তে হয়। কোনো কোনো সময় রোগীবাহী গাড়ী ও পথচারীদের দীর্ঘ সময়ও অপেক্ষা করতে হয়। রোগীবাহী গাড়ী ও এ্যাম্বুলেন্স গুলোতে থাকা জরুরী রোগীদের জন্য যানজটে থাকা এ সময়টা আরো বিপদজনক হয়ে পড়ে। এ নিয়ে রোগীর অভিভাবক ও পথচারীদের অভিযোগের শেষ নেই।
পথচারীরা বলছেন, রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনের রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত ও দখল হওয়া অতিবিলম্বে দখলমুক্ত করতে হবে। যাতে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী গাড়ীগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। কোনোভাবেই বাধার সম্মুখীন না হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
নগরীর লক্ষীপুর মোড় থেকে শুরু করে আউটডোর হয়ে রামেক হাসপাতালের শেষ গেট পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে চা, সিঙ্গাড়া, পুরি, স্যান্ডেল, প্লাস্টিক সামগ্রী, অসবাবপত্র, পোশাক ও পান সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরণের দোকান বসে। এরমধ্যে কিছু দোকান ভ্রাম্যমাণ হলেও বাকি দোকানগুলো স্থায়ীভাবে বসে। ভাতের দোকানগুলোতে অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য অ্যত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকানিরা অন্যান্য দোকানের থেকে বেশি দাম নেয় ও ক্রেতাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। বাইরে থেকে আসা লোক বেশি হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দোকানিরা পুলিশ বক্সে মাসোয়ারা দিয়ে ফুটপাত ও রাস্তার অর্ধেক অংশ দখল করে ব্যবসা করে। দোকান ভেদে প্রতিদিন ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত মাসোয়ারা তুলে পুলিশ। তবে প্রতিদিন ২০ টাকা ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশির ভাগ দোকান থেকে তোলা হয়। দোকানিদের মধ্যে থেকে ১ জন এই টাকা তুলতে সহায়তা করে। যদি কেউ টাকা দিতে না চায় তাহলে তাকে বসতে দেওয়া হয় না।
এক দোকানি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পুলিশ বক্সে টাকা দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। দোকানিদের মধ্যে থেকে ১ জন ও পুলিশ কন্সটেবল এসে সেই মাসোয়ারার টাকা নিয়ে যায়। দোকান চালাতে চাইলে মাসোয়ারার টাকা দিতেই হবে। তবে আরও বেশ কয়েকজন দোকানি তারা একই কথা বলেন।
জানতে চাইলে নগরীর লক্ষীপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (এসআই) হাসান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। লক্ষীপুর থেকে রামেক হাসপাতালের এমন চিত্র আমি আসার আগে থেকে রয়েছে।
তবে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এব্যাপারে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের পরে লক্ষিপুর থেকে রামেক হাসপাতালের সামনে অবৈধভাবে দোকানপাট উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পুর্ণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার কারনে এগুলো হচ্ছে। তবে টাকা উত্তোলনের পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। আমার থানার কেও জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, মহানগরীর লক্ষীপুর- রামেক হাসপাতালের সামনের ফুটপাত ও যানবাহন চলাচলের রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, ফলের দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দোকান সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। এসব দোকান গুলো ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। চলে গভির রাত পর্যন্ত খদ্দের ডাকাডাকি ও টানাটানি। এতে রাস্তার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা চলছে মহানগরীজুড়ে। আরএমপির পক্ষ থেকে নগরবাসীকে এসকল অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট উচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোন প্রতিকার মিলছে না! তাই এতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
বিএ