সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

সদর আসন নিয়ে ১৪ দলের একাধিক নেতার দৌড়ঝাঁপ: মাথা ব্যাথা নেই  বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩
রাজশাহী

রাজশাহী  জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্থানীয়  শীর্ষ নেতা ও  ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের মধ্যে চলমান কলহে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শক্তি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। একে অপরকে কটাক্ষ করে দেয়া বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার পারস্পরিক দূরত্ব আরো বেড়েছে। এ দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশ  ওয়ার্কাস পার্টির  সাধারণ  সম্পাদক ও বর্তমান  এমপি ফজলে হোসেন বাদশা’র সাথে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য ও

রাজশাহীর মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যকার দ্বন্দ্বও দৃশ্যমান। রীতিমতো রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে দুটি ভিন্ন মেরু দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের পারস্পরিক কলহের অগ্নি শিখা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পরেছে।  তবে  খায়রুজ্জামান লিটন ও ফজলে হোসেন বাদশা  তাদের পারস্পরিক কলহের বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন না। তারা দু’জনই দাবি করেন তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তারা ঐক্যবদ্ধ ভাবেই কাজ করছেন।

তবে বিবাদের করেনে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের শক্তি বিভাজিত হয়ে পরেছে। এর প্রভাব পরেছে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়েও। শরিক দলের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সমর্থন পেয়ে পরপর ৩ বার রাজশাহী- ২ (সদর) আসনের এমপি নির্বাচিত হোন জনাব ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এইবার  এমপি পদটি  হাতছাড়া করার কোনো ইচ্ছা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের  অভিযোগ প্রতিবার ভোটের আগে  ফজলে হোসেন বাদশা সবার সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন ।

কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর সেই অঙ্গীকার বেমালুম ভুলে যান। এ কারণে আগামী নির্বাচনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে নিজেদের দলীয় প্রার্থী চান তাঁরা। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা চান এইবার আওয়ামী লীগ থেকেই  রাজশাহী_২ আসনের জন্য যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক। এতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের ভিত্তি আরও শক্ত হবে বলে তারা মনে করেন। তবে,  এমপি পদ ছেড়ে দিতে নারাজ ফজলে হোসেন বাদশা।

জানা গেছে, রাজশাহী-২ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেয়রপত্নী শাহিন আক্তার রেনি ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এ দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। ১৪ দলীয় জোট জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকেও দলটির মহানগর সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু  বলেন, ‘শাহিন আক্তার রেনি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজও করে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছা আছে রাজশাহী-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি ইলেকশন করে নির্বাচিত হয়ে জনগণের পাশের দাঁড়ানোর। কিন্তু এটা নির্ভর করছে দলীয় হাইকমান্ডের ওপর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাসখানেক আগেও রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপির বিরোধ ছিল প্রকাশ্য।

নগরজুড়ে গুঞ্জন রয়েছে মেয়রপত্নী শাহিন আক্তার রেনি রাজশাহী-২ আসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা ভালো চোখে দেখছেন না শরিক দলের নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। এ নিয়ে রাসিক নির্বাচনের আগে কয়েকটি জনসভায় মেয়র লিটন এর নাম সরাসরি নাম না  নিলেও  তাকে ইঙ্গিত  করে বলেন, লিটনের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সখ্যতার এবং শরিক দলের এমপি হয়েও তাকে অবমূল্যায়ন করার বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন।

তবে রাসিক নির্বাচনের আগেই ১৪ দলের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে উভয়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু মেয়রপত্নী রেনির সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়টি পুনরায় ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপড়েনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। উপরন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠ গুছিয়ে এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের দাবিটিও ভাবাতে পারে দলটির ঊর্ধ্বতনদের।

জানা গেছে, তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে তার সুদৃঢ় মেলবন্ধন। মাঠ গুছিয়ে রাসিক মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পাননি। তাই এবার নতুন করে তিনি রাজশাহী-২ আসনে দল থেকে এমপি পদপ্রার্থী হতে চান। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেয়রপতœী রেনি ও ডাবলু সরকারের মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি অনেকটায় আওয়ামী লীগকে ভাবিয়ে তুলবে এবং দলের মধ্যে সংশয় ও সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটাবে বলেও ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মধ্যে চলমান বিবাদ, দূর্নীতি, ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিতর্কিত নেতাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আশংকা রয়েছে বেশ কয়েক এমপির।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের গুছিয়েছি, জণগণের খুব কাছে গিয়ে মিশেছি। তাই একটা আস্থার জায়গা থেকে মেয়র নমিনেশন চেয়েছিলাম, পাইনি। আপার (শেখ হাসিনা) কাছে এবার সদর আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইব।

মনোনয়ন চাইলে শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টানা তিন তিন বার বাদশা ভাই মনোনয়ন পেয়েছেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এইবার দল থেকেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হোক।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, আমাদের লক্ষ্য এখন নির্বাচন নয়, বরং সুষ্ঠু  নির্বাচন করানোর লক্ষ্যে আন্দোলন ও সংগ্রাম করা। এবিষয়ে  মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, সেটি হচ্ছে-এক দফা আন্দোলন। এর বাইরে আমি আর কিছুই বলতে চাই না।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অনেকটাই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রাজশাহী-২ আসনে এখনও নিজেদের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেনি তারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে চার জামায়াত নেতার নাম সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছে। তারা হলেন-রাজশাহী মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক এমাজ উদ্দিন ম-ল, রাজশাহী মহানগরের সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসাইন, রাজশাহী মহানগরের নায়েবে আমির আইনজীবী আবু মোহাম্মদ সেলিম ও রাজশাহী মহানগরীর সহকারী সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহবুবুল হাসান বুলবুল।

বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন বরিশালে তাদের মেয়রপ্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহী ও সিলেটের ভোট বর্জন করে। তবে দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জুলাইয়ে সারা দেশে দলটির কমিটি গঠনে কাজ করবে। আর সেপ্টেম্বরে নতুন গঠিত কমিটি নিয়ে চালাবেন পুরোদমে প্রচার। সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন মাসের কর্মসূচি দেবে দলটি, হবে কয়েকটি জনসভা। আপাতত ভেতর ভেতর নিজেরাই সংসদ নির্বাচনের নীরব প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানান রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. তারিফ উদ্দিন। প্রার্থিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজশাহী-২ আসনের জন্য জেলা শাখার সহ-সভাপতি মো. ফয়সাল হোসেন মনি ও মহানগরের সাবেক সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের মধ্যে যেকোনো একজনকে নির্বাচন করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্র থেকে নেতৃবৃন্দ এসে তা নির্ধারণ করবেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং বিরোধী দলের নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এর দ্বন্দ্ব  নিয়ে দলের নেতা–কর্মীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। কে কোনো মেরুতে অবস্থান করবেন এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মনে রয়েছে শঙ্কা।

জ/ন

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..