মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন

সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

অনুসন্ধান ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পটভূমিতে আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে পাঁচটি প্রস্তাব রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৩ মে) জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ৭৮তম অধিবেশনে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এ প্রস্তাব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমি যে প্রস্তাবগুলো রেখেছি সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে এসক্যাপ বিবেচনা করতে পারে এবং অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, আমি যে পাঁচটি পদক্ষেপের প্রস্তাব করতে চাই, সেগুলো এসক্যাপ বিবেচনা করতে পারেন।

শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবগুলোতে জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের জন্য সহযোগিতার সুবিধার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোতে পর্যাপ্ত তহবিল এবং প্রযুক্তি বরাদ্দের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত হয়ে সহায়তা করার ও পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী আরেকটি প্রস্তাবে ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তথ্যপ্রযুক্তি বৃদ্ধির জন্য আইসিটি’র প্রসারের কথা বলেন যা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় পরিষেবাগুলোকে সক্ষম করবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন রুশ-ইউক্রেনীয় সংঘাত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো যুদ্ধে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিবেশনের থিম, ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন অগ্রসর করার জন্য একটি সাধারণ এজেন্ডা,’ একটি টেকসই বিশ্বের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব এবং সংহতি জোরদার করতে সঠিকভাবে পদক্ষেপ বেছে নেওয়া হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে স্নাতক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি আমাদের পরিকল্পিত উন্নয়ন যাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতি যা, আমরা গত ১৩ বছর ধরে অনুসরণ করছি। তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জনগণই আমাদের উন্নয়ন সাধনার কেন্দ্রবিন্দু, এসডিজিতেও তাই। আমাদের সরকার এসডিজিতে দেওয়া কাঠামোর পরিকল্পিত নথিতে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং আইসিটির একীভূূতকরণের চ্যালেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা এসডিজি-১ এবং এসডিজি-২ এর মূল প্রতিপাদ্য। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মহামারি মোকাবিলা করার সময় তার সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। আমাদের সময়োপযোগী এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপগুলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিচালনা করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ নেতিবাচক বা নামমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশ একটি প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। আমরা ২০২১-২২ সালে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা করছি। তার সরকার ইতোমধ্যে প্রায় সকল নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার আওতায় এনেছে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ-এর চেয়ার হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’র খসড়া তৈরি করেছে এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে সমৃদ্ধির দিকে, স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ভাগ করা সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখি।’ বাংলাদেশ সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি এবং ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগে যুক্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের এসডিজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে সাহায্য করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড, এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নেটওয়ার্কিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ইউএন এসক্যাপ-এর অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আমরা এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে এবং অন্যান্য পদক্ষেপের জন্য ‘এসক্যাপ’এর উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছি।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে এবং এই মানবিক সংকট নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের শরণার্থীদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো আগ্রহ এবং সক্রিয় সমর্থন আশা করি। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমি যে প্রস্তাবগুলো রেখেছি সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে এসক্যাপ বিবেচনা করতে পারে এবং অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

বিএ

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..