এই কম্পিউটারের যুগে এসেও মজুরি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বরেন্দ্রভূমি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সমতলের আদিবাসী নারী শ্রমিকেরা। একই সাথে কাজ করেও পুরুষ শ্রমিকরা যা পাচ্ছেন, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাচ্ছেন তার চেয়ে অনেক কম। এনিয়ে কথা বলার মত কেউ নেই তাদের পাশে। আদিবাসীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রয়েছে এই মহাদেবপুরেই। কিন্তু আদিবাসীদের জীবন মানের উন্নয়নে এরা ভূমিকা রাখতে পারছেন না। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দুপুরে উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কালুশহর মোড় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত পাকা সড়কের পাশে কালুশহর গ্রামের মাঠে ধান ক্ষেতে একসাথে আগাছা নিরানোর কাজ করছিলেন ৩ আদিবাসী নারী আর একজন মুসলমান পুরুষ। কথা হলো কালনা কুমিরদহ গ্রামের দুলাল পাহানের মেয়ে কিশোরী রিনা রাণী পাহানের সাথে।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে সে। মা ঝাড়ো পাহানী আর প্রতিবেসী গণেশ পাহানের স্ত্রী সোনামনি পাহানীর সাথে পায়ে হেঁটে ৫ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে কাজ করতে এসেছে এই মাঠে। বাবা বেকার। মেয়েরাই আদিবাসীদের সংসারের হাল ধরেন। ভরা মৌসুমে কৃষি কাজ করেই চলে তাদের। মাটির সোঁদা গন্ধ শুকে ধান লাগানো, আগাছা নিরানো, ধান কাটা, মাঠ থেকে মাথায় করে ধানের বোঝা বয়ে নিয়ে আসা, মারাই করে বস্তায় তোলা সব কাজই করে ওরা। আদিবাসী নারীদের সাথেই কাজ করেন মুসলমান আর হিন্দু পুরুষরা।
কিন্তু একই সমান কাজ করেও আদিবাসী নারীরা বেতন পান অনেক কম। রিনা জানায়, তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হররোজ ৭ ঘন্টা মাঠে কাজ করে। এজন্য প্রতিদিন মজুরি পায় মাত্র ২৫০ টাকা। সকালে ভাত খেয়ে বের হয়। রাতে গিয়ে আবার খাওয়া। দুপুরে মহাজন খাওয়ান মুড়ি। এভাবেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম তাদের। তাদের সাথে কাজ করছিলেন কালুশহর গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান। তিনি জমির মালিক কালুশহর মঠপুুকুরিয়া গ্রামের শামসুল আলমের
ছেলে খাইরুল ইসলামের আত্মীয়। ৬ বিঘা জমিতে লাগানো বোরো ধানের ক্ষেতে আগাছা নিরানোর কাজ করছেন। একই সমান কাজ করে রোজ ৩৫০ টাকা মজুরি পান তিনি। ‘পুরুষ মানুষ বলেই রোজ ১০০ টাকা বেশি পাই’ মন্তব্য করেন তিনি। আব্দুর রহমান জানালেন, আদিবাসী নারীদের কম টাকা বেতন দিতে হয় জন্য জমির মালিকরা শ্রমিক হিসেবে তাদেরকেই পছন্দ করে থাকেন। অন্য পুরুষদের চেয়ে তারা কাজও করেন দ্রæত। এক্কেবারে জাত অভিজ্ঞের মত। কিন্তু তাদের মজুরি কেন এত কম তার গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
বিএ