পাবনায় ২২ বছর আগে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এত দিনেও সেতু দুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় এলাকাবাসী এগুলোর কোনো সুফল ভোগ করতে পারছে না। উপকারের নামে এখন উল্টো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় হাজারো মানুষকে। জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামে ও সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের রামাকান্তপুর গ্রামে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মাণ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সেতুর দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেনি এলজিইডি। ফলে সড়কের মাঝখানে দ্বীপের মতো একাকী দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া সেতু দুটি কোনো কাজে আসছে না।
জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০ ফুট উচ্চতার একটি সেতু ২০০১ সালে নির্মিত হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এই সেতুটিও জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না।
সমাজ গ্রামের বাসিন্দা জালাল প্রামাণিক বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় সমাজ, বলচপুর, মিয়াপাড়া, গদাইরূপসি, বানিয়াবহু, সাতবাড়িয়া, ময়দানদিঘীসহ ৭টি গ্রামের মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এত টাকা দিয়ে সেতু বানানোর পর এটি আজও ভোগ করতে পারেনি এলাকাবাসী। রাস্তা ও সেতুটির সমস্যার সমাধান হলে এলাকাবাসী ফসল আনা-নেওয়াসহ দৈনন্দিন কাজে অনেক উপকার হতো।
সমাজ গ্রামের ব্যবসায়ী জুয়েল রহমান বলেন, ২১ বছর আগে কংক্রিটের তৈরি ৭০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। কারণ সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নেই। সেতুটি অনেকটা দ্বীপের মতো একাকী দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের এতগুলো টাকা গচ্চা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, সেতু দুটি নির্মাণের বিষয়ে আমার ভালোভাবে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করব।
চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করব।
এদিকে জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের রামাকান্তপুর গ্রামে ২০০১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফাঁকা মাঠে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতুটি নির্মাণ করে। কিন্তু প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার সেতু নির্মাণ করলেও এর দুপাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে এলাকার লোকজন সেতুর কোনো সুফল পাচ্ছে না।
রামাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা অকিল উদ্দিন জানান, গাজনার বিলবেষ্টিত গ্রামটি বৃষ্টির পানিতে বছরের প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধ থাকে। পানি নেমে গেলে মাঠে ফসল আবাদ শুরু হয়। মাঠ থেকে ফসল আনার জন্য স্থানীয় কৃষকরা একটি সেতু ও সড়ক নির্মাণের দাবি জানালেও দীর্ঘদিনেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। তাই স্থানীয় লোকজন সেতুর পাশ দিয়ে মাটি ফেলে একটি সরু রাস্তা তৈরি করেছেন।
তিনি আরও জানান, তিনটি গ্রামের মানুষ সেতুর পাশের এই সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বর্ষার সময় এ এলাকা ডুবে যায়। তখন নৌকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
সুজানগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রাকিব হোসেন বলেন, সেতুটি অনেক বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে সেতুটি শিগগিরই পরিদর্শন করা হবে। সংযোগ সড়ক করা গেলে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএ