সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

করোনা টেস্ট ও টিকা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা 

বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

বিনিময়ে ভুয়া টেস্ট ও সার্টিফিকেট দিচ্ছে চক্র টার্গেট প্রবাসী ও বিদেশগামীরা  অনুসন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যে কোন মুহুর্তে গ্রেফতার   প্রবাসীযাত্রীদের করোনা টেস্ট ও করোনার টিকা নিয়ে ভয়ঙ্কও জালিয়াতী করছে একটি চক্র। টাকার বিনিময়ে টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ করে দিচ্ছে এমনকি টিকা না দিয়েও জালিয়াতি করে টিকা দেয়ার সার্টিফিকেটও দেয়া হচ্ছে। নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে আসার পর পূন:পরীক্ষায় পজিটিভ আসার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চক্রকে সনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা।

করোনা টেষ্ট নিয়ে ভয়ঙ্কর জালিয়াতিতে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ গ্রেফতার করলে দেশে প্রথম জালিয়াতির এ ঘটনা সামনে এসে। এতে করে অন্যান্য হাসপাতাল সতর্ক হলেও দুই বছর পর করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বেড়ে যাওয়ায় আবারো জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর হযরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংযুক্ত

আরব আমিরাতগামী (ইউএই) যাত্রীদের মধ্যে অনেকে ৪৮ ঘণ্টা আগের নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে করা টেস্টে করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। পজিটিভ হওয়ায় যাত্রা অনিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়েও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সূত্র জানায়, আগে প্রতিদিন গড়ে দুই-চারজন যাত্রীর পজিটিভ রেজাল্ট আসলেও সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক যাত্রী পজিটিভ হচ্ছেন।

একদিনে ১০০-১৫০ যাত্রীর করোনা পজিটিভ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, নতুন বছরের শুরু থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় দুবাইগামী যাত্রীদের হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। করোনা

ডেডিকেটেড হাসপাতালে এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর থেকে পাঠানো পজিটিভ রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলেও প্রতিদিন শতাধিক যাত্রী পজিটিভ হওয়ায় ভবিষ্যতে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা দুরূহ হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। আমিরাত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দুবাইগামী সব যাত্রীকে ফ্লাইট ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগের আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে যাত্রা করতে হচ্ছে।

যাত্রীদের সুবিধার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি ছয়টি প্রতিষ্ঠান শাহজালালের অভ্যন্তরে এবং শাহ আমানত বিমানবন্দরে চারটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা করছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত শাহজালালে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ২০৯ জন যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে এক হাজার

১১৭ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৯ জন যাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। একই সময়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৪ হাজার ৯০২ জন যাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় ২২৪ জন করোনা পজিটিভ হয়। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা

করে ৩৩ জনের পজিটিভ রেজাল্ট আসে। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় খুব সহজেই বিপুলসংখ্যক মানুষ শনাক্ত হচ্ছেন। বর্তমানে ঘরে ঘরে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি হচ্ছে। দুবাইগামী যাত্রীদের অনেকেই প্রবাসী শ্রমিক। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিমানবন্দরে আসেন। ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা

পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও পরবর্তী সময়ে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে বিমানবন্দরে আসা এবং ভেতরে বেশ কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করার সময়ে করোনায় আক্রান্ত হন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ দুবাইগামী যাত্রীদের মধ্যে শতাধিক করোনা পজিটিভ হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ৪৮ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ যার, তিনি যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। ২-৩ দিনের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে তিনি একদিনে ১১৩ জন রোগী পাঠান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। এমতাবস্থায় প্রতিদিন এভাবে বিপুলসংখ্যক রোগী পাঠালে তারা ভর্তি করাতে পারবেন না। এদিকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট

নেগেটিভ আনার পরও হাসপাতালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পজিটিভি হওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে এক জালিয়াতি এক চক্রেরও সন্ধান পেয়েছে। যে কোন মুহুর্তে তারা আইনের আওতায় আসবে বলেও জানা গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে অনুমোদিত কয়েকটি সেন্টারে করোনা টেষ্ট হয়ে থাকে।

 এর মধ্যে প্রবাসী যারা দেশে এসেছেন আবার চেল যাবেন কিংবা জরুরী কাজে দেশের বাইরে যাবেন তাদেরকে টার্গেট করছে এই চক্র। ১০-১৫ হাজার টাকায় নেগেটিভ রেজাল্ট দেয়ার চুক্তি করে এ কাজ চলছে। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য মতে, শুধু টেস্টের রেজাল্ট নয় টিকা দেয়ারও সার্টিফিকেট জাল করে দেয়া হচ্ছে। কারও মর্ডানার আবার কারো ফায়জার টিকা দেয়া হচ্ছে মর্মে তারা জাল সার্টিফিকেট বানিয়েও দিচ্ছে।

এ চক্রের একটি ছদ্মনাম রয়েছে ‘টাইগার’। টাইগার চক্রটি মূলত তার কয়েক সহযোগী মিলে এ কাজটি করে যাচ্ছে। বিমানবন্দরে ল্যাব টেষ্ট বসানোর আগে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে এখনো তারা এ কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এদের প্রতারণার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার প্রবাসীরা।

লোভের বশবর্তী হয়ে তারা এ কাজ করলেও বিমানবন্দরে ল্যাব টেষ্ট বসানোর পর নেগেটিভ রেজাল্ট পজেটিভ আসা নিয়ে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট এ তথ্য দেয়। এরপরই অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রসঙ্গত, করোনা পরীক্ষায় ভয়ঙ্কর প্রতারণার আশ্রয় নেয়া বহুল আলোচিত বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরপর বেরিয়ে আসে হাসপাতালের প্রতারণার ভয়ঙ্কর কাহিনী।

বিএ

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..