সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ পুলিশের প্রায় দুইশত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিএনপির দুই নেতার পৃথক মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল তারেকের আদালতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজশাহী মহানগরীর যুগ্ম আহবায়ক মো: বজলুল হক মন্টু বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুজ্জামানকে এক নম্বর আসামি করে আরও ৫জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা ডিবি পুলিশ ও র‍্যাবের ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত বাকি ৫জন হলেন বোয়ালিয়া মডেল থানায় ততকালীন সময়ে কর্মরত বোয়ালিয়া মডেল থানার এ.সি সাইফুল ইসলাম, ওসি জিয়াউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই ওমর শরীফ, ইন্সপেক্টর তদন্ত মো: হাফিজুর রহমান এবং এস.আই নাসির মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। মো: বজলুল হক মন্টু’র পক্ষে মামলাটি আদালতে দাখিল করেন এডভোকেট মুহাম্মদ আতিকুর রহমান ইতি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে এবং আগামীকাল (সোমবার) ৯ই সেপ্টেম্বর মামলার বাদি মো: বজলুল হল মন্টুর জবানবন্দি রেকর্ড করে আদালত আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন বজলুল হক মন্টুর এডভোকেট ইতি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মো: বজলুল হক মন্টু বলেন, “স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময় তার পেটোয়া পুলিশবাহিনী দ্বারা আমি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে ও আমার পরিবারকে অবর্ণনীয় মানসিক নির্যাতন ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। বাড়ি ঘর ছাড়া হতে হয়েছে। এতদিন আমরা এইসমস্ত নির্যাতনের কোনো ন্যায় বিচার পায় নি। আইনের দ্বারস্থও হতে পারি নি। এখন স্বৈরাচারের পতন হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। আমি তাই এখন আইনের দ্বারস্থ হয়েছি ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায়।”

মন্টু আরও জানান, বিগত স্বৈরাচার শাসনের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারেনি। বিরোধী মত দমন করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত্রী আনুমানিক ৩ ঘটিকার সময় মন্টু’র বসতবাড়ি বোসপাড়ায় উপস্থিত হয় মামলায় উল্লেখিত আসামিরা (ততকালীন সময়ে রাজশাহীতে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা) মন্টুর বাড়ির মেইন গেটের তালা ভেঙে তারা ভিতরে প্রবেশ করেন। সেসময় মন্টু বাসায় ছিলেন না। আসামিরা মন্টুর বাড়ির দ্বিতীয় গেট ভাঙার চেষ্টা করলে মন্টুর বৃদ্ধ মা তাদের জানান মন্টু বাসায় নেই। মন্টুর মা তাদের গেট না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন এবং দিনের বেলায় আসতে বলেন। এ কথা শোনার পর আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির দ্বিতীয় গেট ভেঙে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বাড়ির আসাবাবপত্র ভাঙচুর সহ, কিছু স্বর্ণালংকার, নগদ ১,৫০,০০০/-( এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা লুট ও চুরি সহ মোট ৯,৫০,০০০ (নয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে বলে মামলার বিবরণিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এইসময় মামলার বিবাদী পুলিশ কর্মকর্তারা যাওয়ার সময় ফাঁকা গুলি করেন এবং মন্টু কে ক্রসফায়ারে হত্যা করার হুমকি প্রদান করেন। তারা যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে মন্টু’র মা হার্ট অ্যাটাক করেন এবং তার কিছুদিন পর মারা যান। এই ঘটনার পর মন্টুর পক্ষ থেকে মামলা করার জন্য গেলেও পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। মন্টুর বাসায় তান্ডব চালানোর খবরটি পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি সহ ছাপা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো: মনিরুজ্জামান শরীফ গত ২৫শে আগষ্ট ২০১৩ সালে তার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় ততকালীন সময়ে কর্মরত ১০জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/৩০০ পুলিশ, ডিবি ও র‍্যাবের সদস্যদের নামে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী চন্দ্রিমা থানায় মামলাটি রুজু করা হয় মামলায় উল্লেখিত আসামিরা হলেন, ততকালীন সময়ে কর্মরত বোয়ালিয়া মডেল থানার এ.সি সাইফুল ইসলাম, ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া, এস.আই আব্দুর রাজ্জাক, এস.আই ওমর শরীফ, কনস্টেবল মোরশেদ, লেফটেন্যান্ট আব্দুল হামিদ ( ততকালীন র্যাব-৫ এ কর্মরত ) এবং আব্দুর রাজ্জাক (এ.এস.আই) ডিবি। মামলার বিষয়টি মো: মনিরুজ্জামান শরীফ নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার মারফত জানা যায়, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে রাত্রি আনু ২টার সময় মো: মনিরুজ্জামান শরীফের নিউ কলোনির বসত বাড়িতে জোরপূর্বক তালা ভেঙে ঢুকে আসামীরা। সে সময় আসামিরা মনিরুজ্জামানের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বাসার কাজের মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাদের কে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে রান্না ঘরের এক কোণে বসিয়ে রাখে। এই সময় আসামিরা মনিরুজ্জামানের খোঁজ করেন কিন্তু মনিরুজ্জামানকে না পেয়ে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবির কর্মকর্তারা বাড়ির জানালা, দামি ফার্নিচার, কাঁচের জিনিসপত্র, ইলেক্ট্রনিক আসবাবপত্র , বাথরুমের কমোড, বেসিন ইত্যাদি ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এসময় আসামিরা বাড়িতে থাকা স্বর্ণালংকার , নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট সহ মোট ২৭,০০,০০০(সাতাশ লক্ষ) টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে এবং বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। লেফটেন্যান্ট আব্দুল হামিদ মনিরুজ্জামান এর মেয়ে চাঁদনিকে কাঁচের বোতল দিয়ে আঘাত করতে গেলে তার স্ত্রীর বাধায় থেমে যান। যাওয়ার সময় আসামি পুলিশ কর্মকর্তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। মনিরুজ্জামান জানান, বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় তাকে ও তার পরিবারকে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে।

মনিরুজ্জামানের মামলাটি এজাহার হিসেবে রুজু করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন।

বিএ..

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..