জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা করে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ। পরে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধীনের ‘ফাউন্ড্রিশপ চেম্বার’ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া অভিযুক্ত রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সেই সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. মিলনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথ মুস্তাফিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজায় মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে সম্প্রতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি কোলাজ ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন রুয়েটের কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ও তোলপাড় শুরু হয়।
শুধু এই কর্মকর্তাই নয়; দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পর ‘আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে জান্নাতের মেহমান করে নিন’ এই শিরোনামে একটি বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেন রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব।
রুম থেকে বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তা মো. মিলনুর রশিদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার কক্ষে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জোরপূর্বক আমাকে আমার কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। পরে কথা বলব।’
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসফাক ইয়াসির ইপু বলেন, ‘অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কক্ষে যান। এ সময় মিলনুর রশিদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা তাকে কক্ষ থেকে বের দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য, রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুফতি মাহমুদ রনি বলেন, ‘আমাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আগে চিঠি হাতে পাই তারপর বলতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এ বিষয়ে (বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার তুলনা করে ছবি শেয়ারের বিষয়টি) কিছুই জানি না। না জেনে মন্তব্য করা তো ঠিক নয়।’
রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতির পিতার বিষয়ে কোনো আপস নয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই ওই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিতে তিন কর্মদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভিসি বলেন, ‘অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করে থাকলে তদন্ত কমিটিকে তাদের বিষয়েও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে করা হয়েছে।
জ/ন
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.