বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠক শেষ করেছে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির গঠন করে দেয়া কমিটি। যারা আগের সরকারের সুবিধাভোগী তারা যেন ইসিতে সুযোগ না পান সে বিষয়টি বিশেষভাবে দেখার আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমনটাই জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা বেশির ভাগ মানুষ বলেছি, যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাবেন তারা যেন আগের সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন।’
শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শুরু হয় প্রথম দফার বৈঠক। যেখানে ১৪ বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। সার্চ কমিটি প্রথম দফার বৈঠকে ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানায়। বৈঠক শেষ হয় ১২টা ৩৭ মিনিটে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, চাকরি এক্সটেনশন করার মাধ্যমে সরকার তার বিশ্বস্ত লোকদের সুবিধা দিয়ে থাকে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই ধরনের লোক যাতে নির্বাচন কমিশনে না আসে। যারা রিটায়ার্ড করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা যেন না আসে।’
যাদের সঙ্গে সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা রয়েছে তারা যেন না আসে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সার্চ কমিটির কাছে বলেও জানান তিনি।
নতুন নির্বাচন কমিশনে যারা আসবে তাদের যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা এবং সাহসিকতা থাকে। প্রস্তাবিত কমিশনারদের নাম আগেই প্রকাশ করার পরামর্শ দেয়ার কথাও বৈঠকে হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক।
সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কতটুকু রাখবে সেটা নাম প্রকাশ করলে বুঝতে পারব।’
বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে কোনো নাম দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমরা কেউ কোনো নাম দেই নাই। আমরা শুধু বলেছি, কিসের ভিত্তিতে নেয়া উচিত, কিসের ভিত্তিতে নেয়া উচিত না।’
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘এই সার্চ কমিটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে নাম পাঠাবে তাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হওয়া। তাদের সততা থাকতে হবে। অর্থের মোহের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করে, তাদের মাধ্যমে যেন গণতন্ত্র উদ্ধার হয়।’
মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ওনারা জানতে চেয়েছেন কী প্রক্রিয়ায় বাছাই করবেন। আমার আগেই অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি মতামত দিয়েছেন যেগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো ভিন্নমত নাই।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দলীয় সরকারের সময় এটা বর্তমান সরকার হোক বা আগের দলীয় সরকার হোক, সে সময়ের বিশেষ সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সুযোগ না পায় তার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। সেই দাবিটা অনেকেই সমর্থন করেছেন।’
সুবিধাভোগী বলতে কী বুঝাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশেষভাবে, বিশেষ ধরনের পোস্টিং পেয়েছেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন।’
আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, ‘সৎ, যোগ্য এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেসব লোকজন আছে, তাদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কোনো লোক যাতে এখানে না আসে। আমরা বলেছি যে ১০ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা হবে, সেটা যেন ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেয়া হয়।’
এসব প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার কথা জানিয়েছে সার্চ কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দিয়ে যাতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে যাতে এদের নির্বাচিত করা না হয়। এ ছাড়া কমিশনার হিসেবে চাকরি নিয়োগ দেয়া হবে তার সার্ভিস রেকর্ড যাতে দেখা হয়। শেষ সার্ভিস জীবন কত, তার সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছে সে বিষয়টি দেখার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের বিশেষ সুবিধাভোগী কেউ যাতে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ না পান- এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। আরও ১০ জনের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা বলেছি ২০ জনের নাম যাতে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয় এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেখান থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।’
নির্বাচনি পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইট শুড বি কম্পলিটলি ট্রান্সপারেট। লোকে যাতে জানে কাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আজকালকার দিনে একটা বোতাম টিপলেই বোঝা যায় কে কী, অতএব আপনাদের জন্য এটা বেছে নেয়া খুব কঠিন কিছু না বলে তাদের জানিয়েছি।’
উপযুক্ত বেশি হলে সিইসিসহ এক বা একাধিক নারী কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জাননি তিনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎকৃষ্ট মানে নির্বাচন দেখেছি, আবার নিকৃষ্ট মানের নির্বাচন দেখেছি। এ দেশে গণতন্ত্রের উত্থান দেখেছি, আবার পতন দেখেছি। আমাদের এখন আস্থা ফেরানোর সময়। ফলে প্রধান পদক্ষেপ এমন হতে হবে, যাতে আমরা এটা পুনর্গঠন করতে পারি। আবার আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারি।’
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.