শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

শিবগঞ্জে একটি ব্রীজের অপেক্ষায় ২০০ বছর!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রধান উপজেলা শিবগঞ্জ। উপজেলার অনেক কৃতি সন্তান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও কাজ করে ভূমিকা রেখে চলেছেন। সিংহভাগ আমও উৎপাদন হয় উপজেলায়। স্কুলকলেজ, মাদ্রাসা, মক্তবসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে উপজেলায়। উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের রাস্তা সহজ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে শুধু একটি ব্রীজের অভাবে পিছিয়ে পড়েছে উপজেলার টি ইউনিয়নের মানুষ। ছয় ইউনিয়ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষের অভাব শুধু একটি ব্রীজের। শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের অবস্থিত পাগলা নদীর উপর বটতলা ঘাটে ব্রীজ

নির্মাণ হলে এই এলাকা অর্থনৈতিকভাবে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে দ্রুত সময়ের মাধ্যে ইউনিয়নের মানুষ পিছিয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত স্কুলকলেজ মাদ্রাসাগামী কোমলমতি শিক্ষার্থী শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। গ্রীষ্মকালে দূর্ভোগ কম হলেও বর্ষাকালে এসব এলাকার মানুষের দূর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণে। নদীতে উজান থেকে আসা ঢলে পানি ভরে গেলে চলাচল করা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সবদিক থেকে অঞ্চলটি এগিয়ে থাকলেও শুধুমাত্র একটি ব্রীজের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বার বার। স্থানীয়দের আক্ষেপ শুধু একটি ব্রীজের। আক্ষেপটা বহু পুারানো হলেও তা পূরণে চেষ্টা করেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। অনেকে বলছেন, ব্রীজের অপেক্ষা ২০০ বছরের।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ এই ঘাট দিয়ে চলাচল করে। দু/একটি ইউনিয়নের মানুষের বিকল্প পথ থাকলেও বেশিরভাগ ইউনিয়নের মানুষকে বর্তমানে নির্মিত বাঁশের সাঁকোর উপরই ভরসা করতে হয়। বাঁশের সাঁকো পারাপারে টোলও দিতে হয় তুলনামূলক বেশি। বাধ্য হয়েই তারা বেশি টোল দিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হন। এই এলাকার ব্যবসায়ী, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরাও চলাচল করতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
তারা আরো অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ব্রীজটি নির্মাণের জন্য আবেদন করলেও তা পূরণ করতে এগিয়ে আসেনি কেউ। সর্বশেষ স্থানীয় আসনের এমপি সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক সাবেক এমপি

গোলাম রাব্বানিও ব্রীজটি নির্মাণ করে দিবেন বলে এলাকাবাসীকে কথা দিয়েছিলেন। কিন্ত কেউ কথা রাখেননি। ব্রীজটি আর করেননি তারা। এভাবেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে বাস্তবায়ন করেননি। যে কারণে স্থানীয়দের ব্রীজে চলাচল করার স্বপ্নও পূরণ হয়নি। বর্তমান স্থানীয় এমপিও ব্রীজটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি ব্রীজটি নির্মাণে অগ্রগামী ভূমিকা রাখবেন বলে এলাকাবাসী দাবি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নে পাগলা নদীর ওপর বটতলা ঘাট দিয়ে শ্যামপুর, মনাকষা, শাহাবাজপুর, বিনোদপুর, কানসাট দুর্লভপুর ইউনিয়নের মানুষ ঘাটটিতে নির্মিত বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পারাপার হয়। ঘাটের এপারে ওপারে ৫টি কলেজ, ১০টি উচ্চবিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসাসহ প্রায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত নৌকায় পারাপার হতে হয় বটতলা ঘাট দিয়ে। বাকি মাস বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে যাত্রীদের দিতে হয় অতিরিক্ত টোল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,

ইজারাদার চেয়ে বেশি টোল আদায় করলে প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়না। বাধ্য হয়েই বেশি টোল দিতে হয়। বিকল্প পথ না থাকায় তারা মানুষকে জিম্মি করে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনজন সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করেও কোন সুরাহা মেলেনি। নির্বাচন আসলে তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হলে তারা আর খোঁজ নেন না অঞ্চলের মানুষের।

শাহাবাজপুর ইউনিয়ন লীগের সাধারণ সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম বলেন, পাগলা নদীর ওপর প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন বটতলা ঘাট দিয়ে ৬টি ইউনিয়নের প্রায় লাখ মানুষ অতি কষ্টে পারাপার হয়ে থাকে। তবুও এখন পর্যন্ত স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সূদৃষ্টি পড়েনি এখানে। দূর্ভোগ কমাতে ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

কয়লার দিয়াড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, একটি ব্রীজের জন্য আমাদের এলাকার মানুষকে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্রীজটির জন্য স্কুলকলেজগামী শিক্ষককে সমস্যার মধ্যে পড়তে। ব্রীজটি নির্মাণে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেনি। ব্রীজটি নির্মাণ হলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে। ব্রীজটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় জন প্রতিনিধি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বলেন, ব্রীজটি নির্মাণ হওয়া জরুরী। দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজটি নির্মাণের স্থানীয়রা দাবি জানালেও এখনো হয়নি। কেন বাস্তবায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রীজ নির্মাণে যারা ভূমিকা রাখতে পারেন তারা তেমনভাবে রাখেননি। রাখলে হয়তো নির্মাণ হতো। আপনি চেষ্টা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমিও চেষ্টা করেছি।

বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে ঘাটটির উপর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করার লক্ষ্যে মাটি পরিক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ডিজাইন, অর্থ বরাদ্দের পর অনুমোদন পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।

শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিউল আহম্মেদ শিমুল বলেন, ব্রীজটি নির্মাণে বিশেষ করে দুটি ইউনিয়নের মানুষের বেশি লাভ হবে। ব্রীজটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই নাম পাঠানো হয়েছে। আমি ব্রীজটি নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের কথা দিয়েছি।

বিএ

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..