সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে ওসি’র ‘ঘুষের টাকা’ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, থানা থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরের সংযুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪

শুক্রবার (৫জুলাই) রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমের দপ্তরে বসে এক ব্যক্তির সঙ্গে খাম লেনদেনের ভিডিও  সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাঁস হয়েছে। এই ভিডিওটি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়া,  ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও জনমনে  নানা আলোচনা চলছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসি তার অফিসকক্ষে চেয়ারে বসে আছেন। ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ওসি মাহবুব আলম তার চেয়ারে বসে আছেন। সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মাহবুব ভাই, ভাই উঠব ভাই। একটু কথা বলে যাই।’ ওসি তার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলেন, ‘হুম’। সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, একটা ছোট খাম দেন।’ ওসি তখন মুচকি হাসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাহবুব ভাই, আপনি আমাকে চিনেন, জানেন, বোঝেন। আমি বিপদে পড়সি বলেই আপনার কাছে আসছি ভাই। আমি বিপদেই পড়ি।

এ সময় ওসি মাহবুব আলম মুচকি হাসেন। তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘দেন একটা খাম দেন।’ এ সময় মাহবুব আলম তার টেবিলের ড্রয়ার টেনে একটি খাম বের করে দেন।’ এরপর ওসি আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দিলাম ভাই, বুইঝেন। তাঁকে অবশ্য আগেরটাও আমি হেল্প করসি।’ ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আমি জানি, আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে আসলে ভাই কাজ হবে।’ এ সময় ওসি বলেন, ‘না, যথেষ্ট হেল্প করসি।’ কথা বলতে বলতে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি ভরা খাম টেবিলে এগিয়ে দিলে ওসি সেটি আবার নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেকদিন এসে ডিটেইলস বলব তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না যদি অফিসিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জিএম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্যে আমার বোনের অপরাধী।’

তবে খামে টাকা দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে  নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগেও মাহাবুবের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে এক নারী পুলিশ পরিদর্শকের স্বামীকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ রয়েছে।  এর প্রতিকার চেয়ে ওই বছরের ২৪ মার্চ রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা।তার সেই অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ খন্দকার গোলাম ফারুক। ওই ঘটনার সময় মাহাবুব আলম দামকুড়া থানার ওসি ছিলেন। আর এই ঘটনায় মাহাবুব আলমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন এক ওসি।

অভিযুক্ত ওসি মাহবুব আলম ওই নারীর সাবেক স্বামী। ২০১৩ সালে তাদের বিয়ে হয়। শারীরিক ও অমানুষিক নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পরে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার আব্দুল ওদুদের ছেলে মাহবুব হুসাইনকে বিয়ে করেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা

ফিটিং মামলা দেওয়া, মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে মাসোহারা উত্তোলন, বহু বিবাহসহ নানা ঘটনায় বহুল সমালোচিত এ ওসি ঘুরে ফিরে আরএমপিতে কর্মরত আছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। তাঁর বাড়ি রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায়।

এইদিকে খাম লেনদেনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার (৬ জুলাই) তাকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আরএমপির মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘খাম লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত হবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বিতর্কিত ওসি মাহবুব আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ” মাফ করেন ভাই। আমার ভুল হয়ে গেছে। দয়াকরে  বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।”

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..