যুদ্ধ নয়, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদি কখনও দেশ আক্রান্ত হয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বর্হিশত্রু মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর তাই বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর আরও গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
যশোরে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে বুধবার সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে ১২টি গ্রোব-ওয়ান টু জিরো প্রশিক্ষণ বিমান সংযোজন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, যুদ্ধে বিশ্বাস করি না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট: সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। কিন্তু যদি কখনও আমরা আক্রান্ত হই, আমাদের সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে নিজের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার। সেভাবেই আমাদের সবসময় প্রযুক্তিগত শিক্ষা, যুদ্ধ শিক্ষাসহ সব শিক্ষাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আমি সবসময় প্রশিক্ষণকেই বেশি গুরুত্ব দিই।’
বিমান বাহিনীর আগামী প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করতে বিভিন্ন সরঞ্জাম যুক্ত করার বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে সংযোজন করি অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিট সম্বলিত ইয়াক-ওয়ান থার্টি কমব্যাট ট্রেইনার, কে-এইট ডব্লিউ জেট ট্রেইনার, এল-ফোর ওয়ান জিরো ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার, এডব্লিউ-ওয়ান ওয়ান নাইন কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর।’
তারই ধারাবাহিকতায়, বিমান বাহিনীতে ১২টি গ্রোব-ওয়ান টু জিরো প্রশিক্ষণ বিমান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই বিমানে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং এটা আমরা জার্মান থেকে সংগ্রহ করেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও কয়েকটি গ্রোব-ওয়ান টু জিরো প্রশিক্ষণ বিমান এ বাহিনীতে যুক্ত হবে, ইনশাআল্লাহ। সে প্রক্রিয়া চলছে।’
এই সংযোজনের মধ্য দিয়ে বিমান বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত হবে বলে আশা প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, ‘একটি কথা মনে রাখতে হবে, শুধু আমাদের দেশ না, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও শান্তি রক্ষায় আমাদের বিমান বাহিনী অবদান রেখে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে বিমান বাহিনী যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।’
জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে সংগৃহীত মূল্যবান গ্রোব-ওয়ান টু জিরো প্রশিক্ষণ বিমানের উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একজন পেশাজীবির প্রধান পরিচয় তার পেশাগত দক্ষতা। মনে রাখবেন, পেশাগত দক্ষতা ও সততার কোন বিকল্প নেই। পরিশ্রম, শৃংখলা ও দেশপ্রেম ব্যতিরেকে লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। আমি আশা করি, আপনারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।’
বাহিনীর আধুনিকায়নে শিগগিরই আনম্যানড অ্যারিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, মোবাইল গ্যাপ ফিলার র্যাডার, কে-এইট ডব্লিউ এয়ারক্রাফট সিমুলেটর, এ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম যুক্ত হতে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শুধু প্রশিক্ষণ নয়, প্রশিক্ষণের সঙ্গে প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের সংমিশ্রণে শিল্পনির্ভর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা নেয়ায় বিমান বাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিমান বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘শুধু যুদ্ধের চিন্তাই না, দেশের মানুষের কল্যাণে ও আর্তমানবতার সেবায় আপনারা কাজ করে থাকেন।’
স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গঠনের ভিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান, এন-২৪ পরিবহন বিমান, এমআই-৮ হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স র্যাডার ইত্যাদি সংযোজন করে তিনি আধুনিক ও শক্তিশালী বিমান বাহিনী গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করেন।’
৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যাধুনিক বিমান মিগ-২৯ ক্রয় করি, হেলিকপ্টার, বিভিন্ন ধরনের র্যাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম। নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পদক্ষেপ নিই’
বিমান বাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নও অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বিমান, র্যাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিংয়ের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তি ও জনবলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার ওভারহলিং করছে। সম্প্রতি বিমান বাহিনীর উদ্যোগে প্রোটো টাইপ বিমান দেশেই তৈরি করার যে গবেষণা চলছে সেটাও আমাদের আশাবাদী করেছে।’
মহাকাশ গবেষণা, বিমান বাহিনীর উন্নয়ন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল সেক্টরকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়।’
সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতির পিতা পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশে মিলিটারি অ্যাকাডেমি, নেভাল অ্যাকাডেমি এবং বিমান বাহিনী অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘বর্তমানে এই অ্যাকাডেমিতে আমাদের অফিসার ক্যাডেটদের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশের ক্যাডেটরাও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।’
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.