টেকনাফের বাহারছড়ার বড়ডেইল গ্রামের একটি বাড়ি থেকে দুই রোহিঙ্গাসহ পাঁচজনকে আটকের পর পুলিশ বলছে, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তাঁদের সেখানে জড়ো করা হয়েছিল। শুক্রবার (আজ) রাতে মাছ ধরার ট্রলারে করে তাঁদের মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এর আগেই গত বুধবার রাতে ওই পাঁচজনসহ ছয়জনকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আটক করে পুলিশ।
সাগরপথে মানব পাচার দুই বছর বন্ধ থাকার পর (২০১৫ সালের জুন থেকে) দালালসহ মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের আটকের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে গত ৯ মে (রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার আগে) দুই বাংলাদেশি দালাল এবং ১৭ রোহিঙ্গাকে টেকনাফ থেকে আটক করেছিল পুলিশ।
টেকনাফ উপজেলা সদর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে বড়ডেইল গ্রাম। এই গ্রামের পাশেই বঙ্গোপসাগর। আটক ছয়জনের মধ্যে দুই রোহিঙ্গা গত সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। দুজনই উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ডি ব্লকে থাকেন। তাঁরা হলেন মো. হারুন মিয়া (২০) ও জিয়াউল হক (১৯)।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়নের বড়ডেইল গ্রামের নুরুল আমিন ওরফে নুর আলমের বাড়িতে মোট ১৫ জন ছিল। অভিযানের সময় আমিনসহ ছয়জন ধরা পড়লেও বাকিরা পালিয়ে যায়। সবাই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিল। আটক অন্য তিনজন রামু ও উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন রামুর খুনিয়াপালং এলাকার মো. ছৈয়দ হোসেন ও মো. আলম এবং উখিয়া উপজেলার রাজাপালংয়ের আলী হোসেন। শুক্রবার রাতে তাঁদের মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল।
২০১৫ সালের ১ মে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে গভীর জঙ্গলে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের দুটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই গণকবরে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর সাগরপথে মানব পাচার বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। ওই বছরের মে ও জুন—এই দুই মাসে কক্সবাজারে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এবং বিভিন্ন ঘটনায় মারা যায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত ১১ দালাল। এরপর জুন মাস থেকে সাগরপথে মানব পাচার বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হলে সাগরপথে মানব পাচার আবার শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছিল টেকনাফের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) টেকনাফ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গারা দলে দলে আসতে শুরু করার পর থেকে মানব পাচারে জড়িত দালালেরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা ছিল। বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকে প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে। সাগরপথে কোনোভাবেই নতুন করে মানব পাচার যাতে শুরু হতে না পারে, সে জন্য দালালদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
টেকনাফ উপকূল থেকে আজ রাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল ১৫ জনের। পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল দালালসহ ছয়জন। এর মধ্যে দুজন রোহিঙ্গা
এদিকে পুলিশ হেফাজতে থাকা রোহিঙ্গা মো. হারুন মিয়া গতকাল টেকনাফ থানায় সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের কাইনদ্যাপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি। মা-বাবা, ভাইবোনসহ পরিবারের নয়জনকে নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে তাঁরা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন। কামাল নামে এক রোহিঙ্গা দালাল সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দেন তাঁকে। কামাল একই শিবিরে থাকেন। তাঁর সঙ্গে দুই লাখ টাকার চুক্তি হয়। এ জন্য আগাম ১০ হাজার টাকা দেন তিনি। বাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছার পর কাজ করে শোধ করার কথা ছিল। দুই দিন আগে তিনিসহ ১৫ জনকে বাহারছড়ার নুর আলমের বাড়িতে নিয়ে আসেন কামাল।
পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর হারুন মিয়ার প্রশ্ন ছিল, পালিয়ে যদি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা যায় তাহলে সাগর পাড় দিয়ে কেন বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়া যাবে না?
আরেক রোহিঙ্গা জিয়াউল হক বলেন, তিনিও ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন কামালকে। তাঁর সঙ্গেও দুই লাখ টাকার চুক্তি হয়।
আটক নুরুল আমিন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান, জালাল আহমদ, মো. উল্লাহ, মো. বেলাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন রোহিঙ্গাসহ ১৫ জনকে তাঁর বাড়িতে রাখলে এক বস্তা চাল দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। ওই ব্যক্তিদের নৌকা রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে এত দিন মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করত। এলাকায় মালয়েশিয়ার দালাল বলে তারা পরিচিত।
দালালেরা আবারও সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে এমন তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে বলে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান। টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনো অবস্থায় মানব পাচার করতে দেওয়া হবে না। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.