শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে যুক্ত ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং

নজরুল ইমলাম জুলু
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

দেশজুড়ে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের কালচার দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। উদ্বেগের বিষয় হলো, মাদক নেশার টাকা জোগাড় করতে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো কিশোর অপরাধীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ংকর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। আরও উদ্বেগের বিষয়, ভাড়াটে হিসাবে তারা মানুষ হত্যা কিংবা নির্যাতনের মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন, পুলিশের নিস্পৃহতার কারণে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংগুলো সম্প্রতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এসব কিশোর গ্যাং এলাকায় হেরোইন পাচারেও লিপ্ত রয়েছে। ছিনতাই ও চাঁদাবাজিও করছে তারা। রাজশাহীতে বর্তমানে পাঁচটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রাখব, উপরে উল্লেখিত কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের যেন দ্রুতই গ্রেফতার করা হয়। শুধু তাই নয়, রাজশাহী সক্রিয় সব কিশোর গ্যাংয় ছিনতাীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলাকাবাসীকে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই কালচারমুক্ত করতে হবে।

কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অবস্থা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে।

তারা আরও বলছেন, আগামী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। বস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সমাজ ও পরিবারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কিশোর গ্যাং কালচার থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

কিশোর গ্যাংয়ের যেসব সদস্যকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তারা সংশোধিত হওয়ার পরিবর্তে আরও ভয়ংকর হয়ে বেরিয়ে আসছে। কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলো কেন কিশোর অপরাধীদের অপরাধপ্রবণ চরিত্র পালটাতে পারছে না, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে।

সম্প্রতি ২২শে জুন, ২০২৩ কিশোর গ্যাং আজিজ বাহিনী নগরীর খুলিপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যার উদ্দেশ্যে  লোমহর্ষক  হামলা চালায়। আজিজ বাহিনীর হামলায় উক্ত এলাকার  মুকুল, মনা ও আলতাব গুরুতর আহত হয়।   আজিজ বাহিনী মুকুল ও তাই মনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে।  বর্তমানে মুকুল ও মনা পঙ্গু অবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন। আরেক ভাই আলতাবের এক হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং অন্য হাতের কয়েকটি আঙুল কেটে ফেলে। আলতাবও এখন পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন।

১০ অক্টোবর, ২০২০ সালে ৫৬ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে মহানগর পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ১২টি থানায় একযোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৬ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে। এরমধ্যে ৩২ জনকে মুচলেকা নিয়ে তাদের অভিভাবকের কাছে তুলে দেয়া হয় ও বাকি ২৪ জনের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ অভিযান আরো জোরতাল করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

১৬ নভেম্বর ২০২০ সালে মহানগরী আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে  ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তুল, দুইটি ফোল্ডিং চাকু, একটি ওয়াকিটকি, একটি রশি, একটি ব্যাগে সেনাবাহিনীর পোশাক, সেনাবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড ও বুট উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চব্বিশনগর কাদমাপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন রাজু (২২) ও নগরীর চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনী ২ নং গলি এলাকারর মুজাহিদুল ইসলাম রুবেলের ছেলে আরাফাত ইসলাম রুষ্ট (১৯)।

পরবর্তীতে অভিযান আর লক্ষ্য করা যায়নি। সূত্র বলছে রাজনৈতিক কারণে পরবর্তীতে অভিযান আর পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের সব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসিকে) নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি আরো যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা  প্রতিহত করা হবে।  সুন্দর এই শান্তির শহরকে, কেউ নষ্ট করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জ/ন

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..