বাঙালিকে ‘দাবায়ে’ রাখা যায় না এবং চাইলে এ জাতি অসাধ্য সাধন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু তারই প্রমাণ বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার শরিয়তপুরের জাজিরায় ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’-এর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমরা আবার উদ্যোগ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থ বন্ধ করে দেয়, একটা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে যে, দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদেরকে বলি এটা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি।’
এ বিষয়ে কানাডার আদালতে মামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই মামলায় এটাই প্রমাণ হয় যে, কোনো দুর্নীতি হয়নি বা দুর্নীতির কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কাজেই আমি সিদ্ধান্ত নেই, কারও অর্থ না। যেহেতু মিথ্যে অপবাদ দিয়েছে, এর জবাব আমরা দেব। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব। ওইটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকেই ভেবেছিল এটা আমরা করতে পারব না।’
৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। সেই প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালিদের কেউ দাবায়া রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। সেটা নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে প্রমাণ করেছি। আজকে সেই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি এবং তার কাজও প্রায় সম্পন্ন।’
দেশবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির কাছে কৃতজ্ঞ। সাহসী ভূমিকা এবং সমর্থন পেয়েছি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতিম দেশও আমাদের সমর্থন দিয়েছে।’
এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের ফলে আমরা মনে করি, আমাদের জিডিপিতে অন্তত আরও এক থেকে দুই ভাগ সংযুক্ত হবে। আমরা উন্নয়নে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারব। সেটা আমি বিশ্বাস করি।’
এর মধ্য দিয়ে সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকের ওই অঞ্চলের উন্নয়ন, এটা দৃশ্যমান। মানুষের কাছেও একটা বিস্ময়। হ্যাঁ, বাংলাদেশ এভাবে উন্নতি করতে পারে। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, দেশ আরও উন্নত হবে।’
শেখ রাসেল সেনানিবাস
সেনানিবাসের নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সেতু নির্মাণ শুধু না, এর নিরাপত্তা বিধানও আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। আর সে নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু এটা খুব দ্রুত শুরু হয়ে যাবে যান চলাচল, কাজেই সেতুর নিরাপত্তা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটো ভাই শেখ রাসেল বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হওয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেনাসিনবাসের নাম শেখ রাসেল সেনানিবাস আপনারা দিয়েছেন। সে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অন্তত তার আকাঙ্খাটা পূরণ না হলেও রাসেলের নামটা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকল।’
বর্হিশত্রুর আক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে
বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, কিন্তু বর্হিশত্রু আক্রমণ করলে তা প্রতিরোধে সশস্ত্রবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোনো হুমকিৃআমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইনা, যুদ্ধ আমরা করব না। জাতির পিতা আমাদেরকে যে পররাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে গেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি।
‘কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনও যদি বর্হিশত্রুর আক্রমণ হয়, আমরা যেন তা যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা যেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি।’
সেই লক্ষ্য নিয়ে সশস্ত্রবাহিনীকে আরও উন্নত, প্রশিক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সশস্ত্রবাহিনী প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে আমাদের দেশের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবে।’
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.