রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বকশিস বানিজ্য ও রোগীদের হয়রানী করে টাকা আদায় সিন্ডিকেটের ১৬ সদস্যকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাস্তি মুলক বদলী করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সামিউল ইসলাম,পরিচালক প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালি ঢাকা। তিনি স্বারক নং স্বাস্থ্য বিধিমালা ৩/বিধি/বদলী-১১০/২০২২/৩৯২৬/১(৯) ও একই স্বারকে ৩৯২৭ দুটি বদলী আদেশ জারী করেছেন। এ আদেশ জারীর ৭ দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যোগদান না করলে চাকুরী হতে অব্যহতি পাইয়াছেন বলিয়া গন্য হইবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এটি বিভাগের রেজিষ্টার ইত্তেফাককে বলেন, প্রাথমিক পর্যয়ে এই ১৬ জনের বদলীর আদেশ জারী হয়েছে। মেডিকেল জুড়ে চুলচেরা তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আরো যারা জড়িত আছেন তাদের রিুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে রংপুরের অভিজ্ঞমহল বলছেন, এটা মাত্র আওয়াস করা হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের বকশিস বানিজ্য ও রোগীদের হয়রানী করে টাকা আদায় সিন্ডিকেটের ১৬ সদস্য হচ্ছেন, মোঃ সিরাজুল ইসলাম (অফিস সহায়ক), মোছাঃবিউটি আখতার( অফিস সহায়ক), মোঃ দুলাল বসুনিয়া ( অফিস সহায়ক),ভানুরাম সরকার ( অফিস সহায়ক), মোঃনরুজ্জামান ( অফিস সহায়ক) মোঃ রইস উদ্দিন (অফিস সহায়ক), মোঃ রহমত আলী নিরাপত্তা প্রহরী, হাসিনা বেগম পরিচ্ছন্নতা কর্মি, মো মোহিত আল রশিদ উদয় (অফিস সহায়ক), মোঃ আল আমীন ইসলাম (অফিস সহায়ক) মোঃ আমিনুল ইসলাম (অফিস সহায়ক) মোঃ মোর্শেদ হাবিব (অফিস সহায়ক) মোঃ আবুলহাসান ওয়ার্ড মাষ্টার,মোঃ শাহাজাদা মিয়া (অফিস সহায়ক) মোঃ আব্দুল আলীম ষ্টোনোটাইপিষ্টি,মোঃ আবুজাফর (অফিস সহায়ক)। এদের পৃথক দুটি আদেশে ৭ও৮ দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে,গত সাত দিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি রোগির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।২১ দিন স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ ( ছাড়পত্র) নেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুর হাইল্যা গ্রামের রফিকুল ইসলাম।গত বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। এসময় তাকে বিভিন্নজনকে সাড়ে ৩০০ টাকা বকশিস দিতে হয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকার তারা মিয়া বলেন, আমার ছেলে লিটনকে গতকাল শুক্রবার রাত ১০-১১ টার দিকে ভর্তি করাই। এসমন সময় ভর্তির জন্য নিছে ১০০ টাকা, ঠেলাগাড়ির জন্য (ট্রলি) নিছে ২০০ টাকা।তারা মিয়ার অভিযোগ, এটা কোন কথা হইলো। তাইলে ওমরা কী বেতন ট্যাতন পায় না। আমারগুলের ভরসায় থাকে...।
লালমনিরহাটের সাহেব পাড়া গ্রামের আলী আকবর বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার ভাইকে ভর্তি করেছি। ভর্তির জন্য নিয়েছে ১০০ টাকা। আর ট্রলির জন্য নিয়েছে ১৫০ টাকা। এটা কেন নেয় জানি না। প্রথমে কিছু বলে না। রোগি নিচ থেকে উপরে নিয়ে যাওয়ার পর বলে, মামা এত কষ্ট করলাম বকশিস দেন। পরে তাদের দিয়ে দেই।প্রথমে ২০০ টাকা দাবী করছিল পরে ১৫০ টাকা দিয়েছি।
রংপুরের তারাগঞ্জের সোহেল রানা বলেন, ২২ তারিখ আমার বোনকে ভর্তি করিয়েছি। ভর্তিতে নিছে ১০০ টাকা আর ট্রলির জন্য নিয়েছে ১২০ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন এই হাসপাতালে সর্বনিম্ম নতুন রোগি ভর্তি হয় ২৫০ জন। সর্বোচ্চ ৪৫০ জন ভর্তি হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৭ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ভর্তি হয়েছেন ২৫৯ জন রোগী।
রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা হাসপাতালে প্রবেশ করে তারা আমার মতে ট্রেইড না ( ট্রেনিং প্রাপ্ত না) হসপিটাল সিসটেম সম্পর্কে বা বিধি বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে এ ধারণের কার্যক্রমে উৎসাহিত হচ্ছে। এই সিসটেম থেকে আমরা বের হতে পারি এবং সরকারি কর্মচারীদের বিধি বিধান সেগুলো আছে সেগুলো মানে তাহলে হাসপাতালের পরিবেশ উন্নত হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পরিচালনা পরিষদে কথা বলেছি। এখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে হাসপাতাল তীক্ষ্ণ তদারকি থাকবে। মানুষ যেন হয়রানীর শিকার না হন, চিকিৎসা সেবা পান সে বিষয়ে সবাইকে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত,গত ১৯ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অর্থো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক এবিএম রাশেদুল আমীর তার মাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে 'বকশিস' বানিজ্যের কবলে পড়েন। বিব্রত এই চিকিৎসক বিষয়টি লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে এবং রংপুরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই চুক্তিভিক্তিক কর্মচারী মাসুদ ও ঝর্ণাকে বহিস্কার ছাড়াও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডাক্তার দের মানব বন্ধন প্রতিবাদ সভা করে।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.