নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর দুর্গাপুরে এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে তালিকা করে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কুহাড় উত্তরপাড়া গ্রামে কথিত শালিশি বৈঠক থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক সাধারন মানুষের তালিকা করে এ চাঁদা দাবি করা হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
অভিযোগ উঠেছে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আয়নালের নেতৃত্বে লিজ সুত্রে মালিক দাবি করা একই এলাকার আলিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মসজিদের নামে লিজ পুকুরটি দখল করে নেন।
কথিত সালিশি বৈঠকে সাবেক চেয়ারম্যান আয়নালকে সভাপতি করে চাঁদার জন্য এলাকার লোকজনের নামের তালিকা করা হয়। ওই কথিত বৈঠকে অর্ধশতাধিক এলাকার জনসাধারণের মাঝে ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় । সেই সাথে বৈঠকে নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক নেতার পরিচয় ব্যবহার করে গণহারে চাঁদাদাবির ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। আয়নাল বাহিনীর তালিকায় থাকা ব্যাক্তিদের দাবীকৃত চাঁদা না দিলেই এমনকি চাঁদা দেওয়ার পরও নির্যাতনের স্বীকার হওয়া নিঃস্ব পরিবার ও এলাকার সাধারন জনগণ ভয়ে কারো কাছে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলীয় এক শ্রেণির নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাটের ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন।
শুধু তাই নয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও চাঁদাবাজির লাগাম টেনে ধরতে কঠোর হুশিয়ারী দেন। সেখানে দুর্গাপুরের বিএনপি নেতা আয়নাল যেন এলাকায় সর্বময়কর্তা হিসেবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে । তিনি তার বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে লাখ-লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানায়।
জানা যায়, কুহাড় উত্তর পাড়া ওয়াক্তিয়া মসজিদের নামে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে তফসিল বর্ণিত ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত ১ একর পকুর মসজিদের নামে লিজ সুত্রে কমিটি মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুত করেন। ওই পুকুরে আনোয়ারা বেগমের ৪২ শতক জমি নিজ নামিয় থাকায় দখল নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুহাড় উত্তর পাড়া গ্রামের একটি খাস খতিয়ান ভুক্ত পুকুরকে কেন্দ্র ওই গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যাক্তির তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী পারিবারিক অবস্থা ভেদে চাঁদার ১৮ লক্ষ টাকা বিএনপি নেতা আয়নালের সহচর আলিমুদ্দিন ও ডাবলুর কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতি ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আয়নাল। এছাড়া ওই খাস পুকুরের মাছ বিক্রির ১ লক্ষ টাকা মসজিদ ফান্ডে রাখা ছিল সেই টাকাগুলো জোর পুর্বক কমিটির কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে । বর্তমানে মসজিদ কমিটিকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আয়নালের নেতৃত্বে আলিমুদ্দিন নামের ব্যক্তিকে পুকুরটি দখল দেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ছবের আলী বলেন,
পুকুরটি মসজিদের নামে মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তত করা হয়। পরে আলিমুদ্দিন নামের ব্যক্তি ঝামেলা শুরু করে। গত ৫ আগস্টের পরে হঠাৎ মসজিদ কমিটিকে ভয় দেখিয়ে পুকুরটি দখলে করে নেন। পরে সালিশি বৈঠকে গ্রামের অর্ধশতাধিক লোককে ভয় দেখিয়ে ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেন। এমন ঘটনায় এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে মসজিদ কমিটির এক সদস্য জানান, আমার উপর চাপানো ভাগের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে আয়নাল বাহিনীর লোকজন একের পর এক প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। তার ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ তটস্থ। মসজিদের পুকুরকে কেন্দ্র করে দাবি কৃত চাঁদার এত টাকা সাধারন মানুষ কিভাবে দিবে। এর পর থেকে ভয়ে গ্রামের মানুষ খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মসজিদের পুকুরকে কেন্দ্র করে দাবিকৃত ১৮ লক্ষ চাঁদার টাকা জন্য সাধারন মানুষ আতঙ্কে এবং প্রানভায়ে অনেকেই এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানাগেছে।
এব্যাপারে কথিত সালিশ বৈঠকে থাকা ঝালুকা ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আয়নালের নেতৃত্বে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে আলিমুদ্দিনের ক্ষতিপুরণ বাবদ জরিমানা করা হয়েছে।
সালিশি বৈঠকের প্রতিনিধি হাতেম আলী মাস্টার বলেন, আয়নাল চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ক্ষতি পুরন বাবদ ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এবিষয়ে কথিত লিজ গ্রহিতা আলিমুদ্দিন বলেন, তারা আমার পুকুরে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ক্ষতি করেছে। পরে সালিশি বৈঠকে ক্ষতিপুরন বাবদ ১৮ লক্ষ টাকা আমাকে দিবে সিদ্ধান্ত হয় ।
জানতে চাইলে সালিশি বৈঠকের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এব্যাপারে, রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকার বলেন, চাঁদা দাবির বিষয়টি আমার জানা নাই। দলের পরিচয়ে কারো চাঁদা দাবির প্রমান পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে, দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাসুদ পারভেজ বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.