সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

দুর্গাপুরে ফসলি জমিতে যত গর্ত স্থানীয় প্রশাসনের তত অর্থ !

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

আগে যেখানে দেখা যেত দিগন্ত জুড়ে সবুজ ফসলের মাঠ। এখন দেখা মেলে শুধু পুকুর, দীঘি আর জলাভূমি। এ উপজেলায় উর্বর তিন ফসলী কৃষি জমি কেটে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় পুকুর আর দীঘি। কারন একটায় ফসলি জমিতে যত গর্ত স্থানীয় প্রশাসনের তত অর্থ!

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা জুড়ে এখনো কৃষিজমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন কিছুই দেখছে না। নামমাত্র কিছু অভিযান চালালেও প্রভাবশালীরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অপরদিকে, ফসলি জমিতে অবৈধভাবে মাটি কাটার পর পরিবহনের জন্য উপজেলার কাঁচা ও পাকা সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় মাটি পড়ে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। অসাধু ব্যাক্তিদের জন্য সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে জনসাধারণ। 

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলা জুড়ে দিন-রাত সমানতালে চলছে পুকুর খননের কাজ। পুকুর খননের ফলে এ উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ।

এদিকে পুকুর খনন রোধে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি-পুকুর খননের খবর পেলে অনেক জায়গায় নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন করছে অসাধু ব্যক্তিরা। ফসলি জমি খনন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় খননকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক ফসলী জমিতে পুকুর খননের কারণে ফসলি জমির পানি নামতে না পারায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও আইন প্রয়োগে নারাজ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার দেলদুয়াবাড়ি ইউনিয়নের পালশার আংরার বিলে পুকুর খনন করছেন বিএনপি নেতা মুরাদ ১৮ বিঘা ফসলি জমিতে তার পাশেই হিরক নামের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি ধ্বংস করে পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।

নওপাড়া ইউনিয়নের (শ্যামপুর) আংরার বিলে মকছেদ নামের এক প্রভাবশালী পুকুর খনন করছে ৫০ বিঘা ফসলি জমিতে। ওই ইউনিয়নের নান্দিগ্রাম বিলে পুকুর খনন করেছেন দুইজন প্রভাবশালী।

আলীপুরে পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে সড়কের বেহাল দশা সৃষ্টি করেছে শফিকুল নামে এক প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা। ওই যুবলীগ নেতার ছত্রছায়ায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহন করার কারনে, সড়কের দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছে এলাকায় অরাজকতা চলছে।

পানানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় তাহেরপুরের যুবলীগ নেতা আসাদুল ওরফে আসাদ সরকারি খাস সম্পত্তি দখলসহ প্রায় ৭০/ ৮০ বিঘা ফসলি ধ্বংস করে কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী জমির মালিকদের অভিযোগ থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে যুবলীগ নেতা আসাদ জোর পুর্বক জমি দখল নিয়ে খনন কাজ করছেন। কিছু বলতে গেলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এব্যাপারে উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

দুর্গাপুর পৌরসভার গুড়খাই (ঋষিপাড়া) এলাকায় আমজাদের সংস্কার পুকুরের মাটি বহনের কারনে কাদাময় রাস্তায় পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে,ঝালুকা ইউনিয়নের আন্দুয়া ইটাভাটা সংলগ্ন এলাকায় আজাদ ১০ বিঘা, এছাড়া চৌপুকুরিয়া গ্রামে পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে রাস্তার বেহাল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসিতে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। জয়নগর ইউনিয়নের হরিরামপুর এলাকায় রাস্তা নষ্ট করে পুকুর খননের মাটি বহন করছে দালাল চক্র।

এছাড়াও মাড়িয়া ইউনিয়নের কিশমত মাড়িয়ায় আশরাফুল নামে এক ভেকু দালাল রাতের আঁধারে কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের কাজ করছে। দিনে একটি আমবাগানে ভেকু গাড়ি রাখছে। মাড়িয়া মৃধাপাড়া গ্রামে জিয়ারুল নামের এক ভেকু দালাল পুকুর সংস্কারের নামে রাস্তার বারোটা বাজাচ্ছে। গ্রামীন মানুষের চলাচলের ওই রাস্তাটি গত অর্থবছরে পাকাকরণ করা হয়েছে। সরকারের কোটি টাকা ব্যায়ের রাস্তাগুলো এখন মাটি বহনকারি দালালদের নিয়ন্ত্রণে।

এ উপজেলায়, প্রভাবশালী কতিপয় রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ চলছে কয়েক বছর ধরে সেই সাথে ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টরে মাটি বহন করে গ্রামীন সড়ক গুলো ধ্বংস করছে পুকুর খননকারী দালাল চক্ররা ।

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, আমার জানামতে দুর্গাপুরে কোথাও কোন পুকুর হচ্ছে না। যা হচ্ছে সংস্কার-রাখেন বলে মুঠোফোন কেটে দেন।

ফসলি জমিতে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে, দুর্গাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণ চন্দ্র মুঠোফোনে বলেন,উপজেলার মুখপাত্র ইউএনও স্যার ও ডিসি স্যার এ বিষয়ে তারা বক্তব্য দিবেন।

এব্যাপারে, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, উপজেলায় আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে পুকুর খননকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইমতিয়াজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন,উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে অবৈধ পুকুর খননকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিএ/

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..