দুদকের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি হয়রানীর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বাধ্যতামূলক অবসর যাওয়ার পরও থামেনি তার দৌরাত্ন। কোন কিছুর পরোয়া না করা সাবেক এ কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জ্ঞাত আয়বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তও চলমান। আলোচিত এ কর্মকর্তার নাম আহসান আলী। তিনি দুদকের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিতর্কিত দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২০১৪ সালের ১১ মে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসানের স্বাক্ষরিত পৃথক দুই প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসান আলী ও পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শফিকুর ইসলামকে বাধ্যতামূলক এ অবসর প্রদান করা হয়।
সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের ০৩/২০১৪ নম্বর সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের দুই উপপরিচালকের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং যেহেতু উক্ত সিদ্ধান্ত সরকারের অনুমোদনের জন্য কমিশন কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয় এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাদের চাকরি হতে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন বলে বিবেচনা করেন সেহেতু গণকর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৭৪ এর ৯ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার তাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরি থেকে অবসর প্রদান করে।
অভিযোগ উঠে, আহসান আলীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল। কর্মকর্তা পরিচয়ে নানা মানুষের নিকট ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষ নিতেন। যার কারণে দুদকে তিনি আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন। এ কারনেই তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, আহসান আলীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলোর তদন্ত চলমান।
জানা যায়, আহসান আলী দূর্নীতির মাধ্যম কোটি কোটি টাকা আয় করে রাজধানীর সবচেয়ে ধন্যাঢ্য এলাকা নিকুঞ্জে একটি প্লট ক্রয় করে সেখানে বিলাস বহুল একটি অত্যাধুনিক একটি বাড়ি তৈরী করেন। এলাকার রাড নাম্বার পাঁচ এর ৪৭ নাম্বার বাড়িটি তার। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করে এই প্রসাদসম বাড়ি তৈরী করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভুগি জানান, আহসান আলী তার গুলশানের ১১ নাম্বার রোডের অফিসে যেয়ে তাকে দুদক মারফত হেনস্তা করা হবে বলে এখনো প্রতিমাসে লাখ টাকা চাদা আদায় করছেন। কোনো মাসে দিতে দেরী হলে আহসান আলী নিজে ভুক্তভুগির গুলশানের সেই অফিসে যেয়ে দুদক মারফত মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে জোর পূর্বক টাকা আদায় করছেন।
ভুক্তভুগি জানান আহসান আলীর এই প্রতারনা শুধু একজন ভুক্তভুগি নয় এমন বহু ব্যবসায়ী এবং মানুষকে দুদকের ভয়ভীতি দেখিয়ে আহসান আলী টাকা আদায় করে যাচ্ছেন।
নিকুঞ্জের এক বাড়ি মালিক সমিতির এক সদস্য জানান, আহসান আলী কি করে নিকুঞ্জের মত জায়গায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রসাদসম অট্টালিকা তৈরী করলো তা কারো বোধোগম্য নয়। কারন এত অল্প বেতনের চাকুরি করে দূর্ণীতি ছাড়া প্রাসাদসম অট্টালিকা তৈরী সম্ভব নয় । তিনি বলেন, নিকুঞ্জ এলাকার নিরিহ বাড়ি মালিকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে কথিত দুদক কর্মকর্তা আহসান আলী দুদকের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করছেন তাদেরকে আহসান আলী তার দুদকের পরিচিতি বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের দিয়ে ভয়ভীতি দেখান।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, যশোরের বেনাপোলে কাস্টমস কমিশনারকে হুমকি ও দুদক থেকে নোটিশ চুরি করে তথ্য বদলে বিভিন্ন দফতরে সরবরাহের অভিযোগে সাবেক দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে বেনাপোল পোর্ট থানায় সেই সময় মামলা করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জিএম আশরাফুল আলম। অভিযুক্ত হন দুদকের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর আহসান আলী
কদিন পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জিএম আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত আহসান আলী ৩১টি চালানে দুই কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৭০৮ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য মোবাইলে কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীকে চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর কমিশনারের অফিসে এসে তাকে হুমকি দেন। এছাড়া দুদক, এনবিআরসহ বিভিন্ন দফতরে বেনামী অভিযোগপত্র জমা দেন।
তৎকালীন সময়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করেন, বেনাপোল বন্দরে দুইশ কেজি ও আড়াই হাজার মেট্রিক টন ভায়াগ্রার দুটি চালান উদ্ধারের সঙ্গে সাবেক ওই দুদক কর্মকর্তার যোগসূত্র পাওয়া যায়। আহসান আলীর এসব কর্মকাণ্ডে বেনাপোল বন্দরে আটশ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়।
এদিকে দুদকের সূত্র জানায়, আহসান আলীর বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। আহসান আলীর বিুরদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে আহসান আলী বলেন, দুদকেরই কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন। তাকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানোর পর আদালতের নির্দেশে তিনি চাকরি ফিরে পান পরবর্তীতে তিনি অবসর নেন।
তিনি কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন।
বিএ