সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১১ অপরাহ্ন

দুই চিকিৎসক হত্যা মামলার ধূম্রজাল কাটেনি এখনো: শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি কেউ!!

নজরুল ইসলাম জুলু:
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

রাজশাহীতে গত ২৯শে অক্টোবর রাতে মাত্র কয়েকঘন্টার ব্যবধানে একই কায়দায় দু’জনে চিকিৎসক হত্যা ঘটনায় এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি মহানগর পুলিশ। ডা: কাজেম এর  হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছিল  বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর রাজশাহী শাখার চিকিৎসক বৃন্দ।

হত্যার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৪ আও ৫ নভেম্বর চিকিৎসকরা কর্ম বিরতিও পালন করেন। কিন্তু,  ১৫দিন অতিক্রম হয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলা দুটির  মোটিফ  উদঘাটন করে হত্যাকারী দের আইনের আওতায় আনা যায় নি। ফলে হত্যাকারীরা এখনো  ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে নিহতের পরিবারসহ রাজশাহীতে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরা ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন  বলেও জানা গেছে। এদিকে, গত ১৫ দিনেও সংঘটিত দুটি চাঞ্চল্যকর হত্যার মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারলেও তদন্তে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, তারা দ্রুতই হত্যাকান্ডে জড়িতদের সামনে আনতে পারবেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানার এসআই রাজিবুল ইসলাম বলেন, ডা. কাজেম হত্যার তদন্তে বলার মতো এখনো কিছু তাদের হাতে নেই। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত কার্যক্রম চলছে।’

এই বিষয়ে রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম  বলেন, ‘দুটি খুনের ঘটনাই পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুতই খুনিদের শনাক্ত করা যাবে। এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি।’

 সূত্র মোতাবেক জানা গেছে, নগরীর বর্ণালী মোড়ে  ২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: গোলাম কাজেম আলী  খুন হন  এবং এ ঘটনার প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যবধানে মহানগরীর  চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজার থেকে অস্ত্রের মুখে এরশাদ আলী দুলাল নামের একজন পল্লী চিকিৎসককে তুলে নিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় ডা: কাজেম এর স্ত্রী চিকিৎসক ফারহানা সোমা বাদী হয়ে আরএমপির রাজপাড়া থানায় অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। অন্যদিকে পল্লী চিকিৎসক ডা. দুলালের ছোট ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এই দুই খুনের কিলিং প্যাটার্ন প্রায় এক ও অভিন্ন। দুটি খুনে ব্যবহার করা হয় সাদা রংয়ের হাইস মাইক্রোবাস।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা যায় , দুটি কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া হত্যাকারীদের শারীরিক গঠন অভিন্ন। হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের সবার মুখ কাপড় দিয়ে বাধা ছিল। প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে  নিশ্চিত হওয়া যায়, ডা. কাজেম ও ডা. দুলাল হত্যার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত, যাকে টার্গেট কিলিং হিসাবে অনেকেই বিবেচনা করছেন। দুই চিকিৎসক হত্যা নিয়ে এখনও রাজশাহীর সর্বত্র চলছে নানা গুঞ্জন। বিশেষ সূত্র মোতাবেক  সূত্র মতে, নিহত ডা: কাজেম আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ৪২তম ব্যাচে এমবিবিএস পাস করেন। পরে এফসিপিএস (ডারমাটোলোজি) ও ডিডিভিসহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনে ডা. কাজেম আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দুই চিকিৎসক হত্যাসহ হরিয়ান বাজারে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যাচেষ্টা, লালপুরে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে মৃত ভেবে গর্তে ফেলে যাওয়া,একরাতে দুই চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো রাজনৈতিক মোটিভ কাজ করেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  এ বিষয়ে আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ডা. হত্যার তদন্তে উল্লেখ করার মতোন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে পুলিশ দুটি হত্যা রহস্য উন্মোচনসহ খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিহতের৷ সাথে ব্যক্তিগত কোনো ক্রোধ বা বিবাদ থেকে এমন হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জ/ন

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..