নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর রুগী দেখে বাড়ি ফেরার পথে ডাঃ গোলাম কাজেম আলী আহমেদ কে ছুরিকাঘাত করে হত্যার প্রতিবাদে, খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) ‘নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’-এর ব্যানারে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) সামনে সকাল১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন ডাঃ কাজেম আলী হত্যাকাণ্ডের সাথে, রাজশাহী সিটির তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এ হত্যাকাণ্ডের ‘অনুমোদন’ দেন। এতে গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তারা।
মানববন্ধনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ এম. মোরশেদ জামান মিঞা বলেন, ‘ ডাঃ কাজেম হত্যার পর তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার বিষয়টি আমাদের কাছে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যায়। নির্বাচনের পটপরিবর্তন ও বিএনপি জামায়াত যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে তার পরিকল্পনা হিসেবে মেয়র সাহেব( সাবেক রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন) এর অনুমোদনক্রমে রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার এর পরিকল্পনা ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র এর সহযোগিতায় এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়।” তিনি ডাঃ কাজেম আলী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন।
তারা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি আনিসুর রহমান, আরএমপি’র উৎপল কুমার (সাইবার ক্রাইম), ডিজিএফআই, ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, ” ওই সময় ১৮টা খুনের ঘটনা ঘটেছে। পেশাদার খুনিরা সুক্ষ্মভাবে খুন করেছে। দুইটা স্টেপে হার্ট তিন ভাগ হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা খুন হয়েছে একইভাবে। কোথায় কীভাবে আঘাত করলে একজন মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হবে এটা সাধারণ মানুষ পারবে? তারা কীভাবে জানবে?’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘র এর এজেন্টরা এই হত্যাকান্ড গুলো ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জনপ্রিয় ডাক্তার কাজেম কেন খুন হয়েছে? একটা আদর্শের জন্য খুন হয়েছে। কাজেমের মৃত্যুর পরে যখন প্রতিবাদ জানাতে গেলাম, তখন আমাদের বলা হলো- যান, আর কোন ডাক্তার খুন হবেন না।” তখনই আমরা বুঝে গেলাম কারা এটা করছে। তারাই আমাদের ক্লিয়ার করল যে, এটা পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে এবং আমাদের প্রতিবাদের পর এটা বন্ধ হয়ে গেল।”
তিনি আরও বলেন, ” আজকে আমরা বিচার চাইবো, কিন্তু কার কাছে বিচার চাইবো? ঐ লোকগুলোই তো চেয়ারে বসে আছে।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) রাজশাহীর নেতা ডা. ওয়াসিম হোসেন, ডা. ফারহান ইমতিয়াজ, ডা. মনোয়ার তারিক সাবু, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) রাজশাহীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী মহিউদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ডা. মুর্শেদ জামান মিঞা, এনডিএফের নেতা ডা. হাসানুজ্জমান হাসু, ডা. ফজলুর রহমান ভুঁইয়া পাভেল, ডা. শাহানা পারভীন রিতু, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ডা. আপেল মাহমুদ, নিহত চিকিৎসক কাজেম আলীর ছেলে আবরার ফারহান আহম্মেদ সাদ, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট জাহিদ হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ডা. কাজেম আলী হত্যার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের চিহ্নিত করা হয়নি। নগরীতে পুলিশ বাহিনীর স্থাপিত ৫ শতাধিক সিসি ক্যামেরা থাকলেও ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাইক্রো কারটি পর্যন্ত জব্দ করতে পারেনি পুলিশ। তারা ডাঃ কাজেম আলী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪২তম ব্যাচের মেধাবী ছাত্র, মেধাবী, দক্ষ এবং জনপ্রিয় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এবং শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং রেটিনা কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদ ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী নগরীর বর্ণালীর মোড়ে রুগী দেখে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হোন। সে সময় তার সাথে ছিলেন শাহীন আলম। তিনি মোটরসাইকেল চালক ছিলেন। শাহীন গ্লোবাল ফার্মাসিউটেক্যালের মেডিকেল রিপ্রেজেনটিভ। তার সঙ্গে প্রায় যাওয়া আসা করতেন গোলাম কাজেম আলী আহমেদ। ঘটনার সময় ডাক্তার কাজেম আলী মোটরসাইকেলের পিছনে বসা ছিলেন। তিনজন একই ধূসর বর্ণের হাইস্ট মাইক্রোবাস থেকে নেমে প্রথমে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে চিকিৎসক কাজেম আলীকে। এর পর তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে রাস্তার লোকজন কাজেম আলীকে ধরাধরি করে রক্তাক্ত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ১টার দিকে মারা যান।
একই রাতে রাজশাহীর কৃষ্টগঞ্জ বাজারের নিজের দোকান থেকে এরশাদ আলী নামের এক পল্লি চিকিৎসককেও মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুটা দূরে সিটিহাট এলাকায় তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এ দুই খুনের ঘটনায় মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। হত্যার কারণও উদঘাটন হয়নি।
বিএ..