খাবারের জন্য সন্তানদের কাছে ভিক্ষা করতে হবে বাবাকে! সমাজের এ কী হাল হল? বিচারপতির আসনে বসে কোনও দিন এটাও শুনতে হবে ভাবেননি! বাবা-মেয়ে সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে বিস্ময়ের সুরে এমনটাই বললেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। অভিযুক্ত মেয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে বাবা সন্তানদের বড় করে তুলল, দেখভাল করল, এখন তাঁর মুখেই অন্ন তুলে দিতে অস্বীকার করছেন সন্তানরা। এই আসনে বসে সমাজের কাছ থেকে এমনও আশা করতে হবে ভাবিনি।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা ৮৫ বছরের বৃদ্ধ তিনকড়ি মিত্র। স্ত্রী ও পুত্রকে হারিয়ে এখন তাঁর ভরসা দুই মেয়ে। তিনকড়ির বাড়িতেই থাকতেন বিবাহিত দুই কন্যা শিপ্রা সাউ এবং শম্পা দত্ত। বাবাও উপহার (গিফট ডিড) হিসাবে মেয়েদের বাড়িটি দিয়ে দেন। কিন্তু সেই মেয়েরাই এখন বাড়ি ছাড়া করলেন বাবাকে। অসহায় অবস্থায় তিনকড়ির ঠাঁই মেলে বন্ধুর বাড়িতে।
ফের কবে ফিরে পাবেন নিজের বাসস্থান? জন্মভিটেতেই কি কাটাতে পারবেন জীবনের শেষ কটা দিন? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতে তাঁর আবেদন, বাড়ির অধিকার মেয়েদের উপর হস্তান্তর করার পর থেকেই অত্যাচার শুরু করেছেন তাঁরা। বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। ফের নিজের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করুক হাই কোর্ট।
এই মামলায় রাজ্যের কৌঁসুলি জানান, সমস্যা সমাধানে পুলিশ বার বার চেষ্টা করলেও বিফল হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি! এই যুক্তি শুনে বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘‘এক জন প্রবীণ নাগরিককে তাঁর বাসস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া আদালতের কর্তব্য। তা না হলে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।’’ বিচারপতির মুখে এমন মন্তব্য শুনে মেয়েদের আইনজীবী জানান, বাড়িতে তাঁরা বাবাকে থাকতে
দিলেও, খাবার দিতে পারবেন না। নিজের অন্নসংস্থান নিজেকেই করতে হবে। আরও বলা হয়, বাইরের কাউকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে না। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও নন।বাবাকে ফেরানো নিয়ে মেয়েদের এই সব শর্ত শুনে চমকে ওঠেন এজলাসের অনেকেই। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘কেন এ সব অপ্রয়োজনীয় কথা বলছেন। যে বাবা সন্তানকে বড় করে তুলেছেন। সেই
বাবাই এখন আদালতে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে সন্তানরা অত্যাচার করছে! এটা উচিত নয়। এমনটা করবেন না। বাবার দেখভাল করুন। দেখবেন আপনাদের ভাল হবে।’’ এর পরেই কড়া অবস্থান নেয় হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, তিনকড়িকে বাড়ি ফেরাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা করতে হবে তমলুক থানার পুলিশকে। এবং তিনি যে সেখানে শান্তিতে রয়েছেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। আদালত আরও জানায়, ‘অত্যাচারিত’ ওই বাবার উপর লক্ষ্য রাখবে পুলিশ।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2024 Onusandhan. All rights reserved.