নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ১১ মে। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা। সেতুটির নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি সেতু নির্মাণ ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড এবং দ্য নির্মিতি (জিভি'র) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সেতুটির মাত্র ৫৫ শতাংশ কাজ সস্পন্ন হয়েছে।
এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত ১০টার দিকে সেন্টারিংয়ের সাটারিং সরে গিয়ে মাঝখানে সাড়ে ৩ ফুট দেবে যায়। ফলে বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর উপর নির্মাণকৃত সেতুটি কোনও কাজেই আসছে না। এতে একদিকে যেমন সরকারের ৩ কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে নির্মাণকৃত সেতুটি কোনও কাজেই আসছে না।
ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় টাঙ্গাইল পৌরসভা সেতুটির কাজ বাস্তবায়ন করছে। ৮ মিটার প্রস্থ ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে সেতুর নির্মাণ কাজ যৌথভাবে শুরু করে ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড এবং দ্য নির্মিতি (জিভি) নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
চলতি বছরের ১১ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে সেতুর উপরের অংশে পৌরসভার প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে ঢালাই করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেতুর সেণ্টারিংয়ের সাটারিং সরে গিয়ে মাঝখানে সাড়ে তিন ফুট দেবে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে গেছে। সেতুর
মাঝখান দেবে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছে। কয়েক জন শ্রমিক সেতু নির্মাণে কাজ করছে। দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভার প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এর আগে এখানে যে বেইলি ব্রিজ ছিল তা পরপর দুইবার ভেঙে যায়। এতে কয়েক বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবার স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে পড়েছে ব্রিজ।’
স্থানীয় নুরু মিয়া বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা ব্রিজের কষ্টে আছি। ব্রিজ না থাকায় এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চান না। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে জমির দামও কমে গেছে। এ ছাড়া ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি দেবে গেছে। সেতু দেবে যাওয়ায় ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়ল।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনেন না। এই মুহূর্তে সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেল।’
এদিকে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পায়। স্থানীয় এমপি প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেন। পরে তার কর্মী আমিরুলসহ অনুসারীদের কাজটি দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, যারা কখনও সেতু নির্মাণ করা দেখে নাই তারা সেতু নির্মাণ করবে কিভাবে? এটা দুঃখজনক। সরকারি অর্থের অপচয় করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জামিল ভাইসহ কয়েকজন। আমার নেতৃত্বে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, শুরু থেকে সেতু নির্মাণের কাজ ঠিক ছিল। নির্মাণের নিয়ম অনুসারেই কাজ চলছিল। প্রাকৃতিক কারণে নাকি নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি হেলে পড়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান বলেন, গত বছর আমি অবসরে এসেছি। আমি কাজটির প্রকল্প পরিচালক ছিলাম। প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর পর কাজটি শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারের কাজের অজ্ঞতা থাকাসহ অফিসিয়াল নিয়ম মানার প্রবণতা কম ছিল। এ কারণে আমি কাজটি বাতিল করতে চেয়েছিলাম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সেতুটি হেলে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিএ
উপদেষ্টা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম জুলু, প্রকাশক ও সম্পাদক : নাজমুল ইসলাম জিম, অফিস : আর,ডি,এ মার্কেট ২য় তলা,সাহেব বাজার, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। ই-মেইল :[email protected], মোবাইল: ০১৭১১-৯৪৩৪৭১, ০১৭১৫০৫৭৪৪০
Copyright © 2025 Onusandhan. All rights reserved.