সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, পাল্টিয়ে যাচ্ছে আরএমপির চিত্র

নজরুল ইমলাম জুলু
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আরএমপির  কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন মোঃ আনিসুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম (বার)। যোগদানের পর পাল্টিয়ে যাচ্ছে আরএমপির চিত্র। গ্রেফতার হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্পর্কিত অপরাধ বা সাইবার অপরাধ। ব্লাকমেইল, পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ওয়েবসাইট হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে টাকা উত্তোলন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারসহ সাইবার অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়া অপরাধ কমতে শুরু করেছে।

এসবের ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চাওয়া তো দূরের কথা সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করা থেকেও পিছু হটেন অনেকেই।

এসব অপরাধ দমনে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর নগরীর সাইবার অপরাধ নির্মূল ও সংঘটিত অপরাধের অপরাধীদের দ্রুত শনাক্তে পুলিশের স্বতন্ত্র এই ইউনিট কাজ শুরু করে। দেখতে দেখতে পথচলার দুই বছর পেরিয়ে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে নগর পুলিশের এই বিশেষ বিভাগ।

সরাসরি অপারেশনাল বিভিন্ন   ইউনিটটিকে  নির্দেশ দিয়ে থাকেন।   আরএমপির সকল কার্যক্রমে বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরনসহ আসামি গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আরএমপি এলাকার সকল ক্লু-বিহিন ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরন ও গ্রেফতার সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে ইউনিটটি।গত ২ বছরে রাজশাহী মেট্রোপলিটনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে প্রায় ৮৬১টির মত ফেইসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। ফেইসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি-ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা, ফেইসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাক করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেইসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধ।

এছাড়াও পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিন্তু বর্তমানে নেই তাই সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্লাকমেইল করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছবি/ ভিডিও প্রচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেইসবুক সংক্রান্ত প্রায় ৮৬১টি অপরাধের মধ্যে ৮৪০টির মত অপরাধ আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট নিষ্পত্তি করেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কিত অপরাধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২ বছরে মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রায় ৩৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও আর্থিক ট্রান্সজেকশন/ ট্রান্সফার সিস্টেমের অপরাধ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিন কোড নিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাক, ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের পরিকল্পনা মাফিক ফাঁদসহ বিভিন্ন অপরাধ পাওয়া গেছে।

ইমো/হোয়াটসঅ্যাপ/ই-মেইল সংক্রান্ত প্রায় ৫৮টির অধিক অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইমো/হোয়াটসঅ্যাপ/ই-মেইল ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণার মত ঘটনা। এছাড়াও ই-মেইল হ্যাক করে বিভিন্ন অপ্রীতিকর তথ্য পাঠানো ও ভুয়া বা বেনামে মেইল আইডি খুলে বিভিন্ন অপরাধের সৃষ্টি।

তিনি বলেন, একই সময়ে টিকটক/লাইকি সংক্রান্ত মোট ১৫টি অভিযোগ এসেছে। যার সবগুলোই শনাক্ত পূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলা।

বছরে এই ইউনিট প্রায় ১৫৩টির মত অপহরণের  অভিযোগ সংক্রান্তে ১৩৯ জন ভিক্টিম উদ্ধার করেছে। এছাড়াও অপহরণে জড়িত আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে এই ইউনিট। অপ্রাপ্ত/অল্প বয়সী মেয়ে/ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রলোভন, বিভিন্ন আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তারা অপহরণ করতো।

হারানো বা চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইল-ল্যাপটপ উদ্ধারের তথ্য উদঘাটনেও সফলতা রয়েছে আরএমপির এই বিশেষায়িত ইউনিটের।

নগরীর ক্লু-বিহীন ঘটনা ও সংঘবদ্ধ  অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইউনিটটি।

এছাড়াও বিতর্কিত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে নিয়েছেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।  অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে  সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মস্থল থেকে। এমন ভালো কাজের জন্য প্রশংসিত নগরবাসীর কাছে। তবে ঘাপটি মেরে রয়েছে এখন অনেক বিতর্কিত পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আবারও বিতর্কিত সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন নগরবাসী।

সার্বিক আইন শৃংখলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকণে নগর পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টার সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা ইউনিটও পরিচালিত হয় আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে। নগরীর প্রায় ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন পূর্বক পুরো নগরীকে নজরদারিতে নিয়ে আসার মত কঠিন কাজও করে যাছে এই ইউনিট।

জানতে চাইলে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) বলেন, প্রতিদিনই  আমার কাছে যে সকল তথ্য আসে। আমি তাৎক্ষণিক সে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়াও সাইবার ক্রাইম ইউনিটে আশা ভুক্তভোগীরা সহযোগিতা নিচ্ছে, সব ধরনের উপকার পেয়ে তারাও সন্তুষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি নগরীর শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষএই ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান আরএমপি কমিশনার।

ন/জ

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..